গণপিটুনির যেদিন জন্ম হয়েছিলো- ওহিদুল ইসলাম।
শিয়াল শকুন নেকড়ের উন্মত্ততায় এ বাংলায় কোথায় কবে গণপিটুনির জন্ম হয়েছিলো জানেন? কোনো চুরি বা ডাকাতির ঘটনায় নয়। চর দখল বা জমি দখলকে কেন্দ্র করে নয়। কোনো খেলার মাঠে নয়, যাত্রার প্যান্ডেলে নয়, সিনেমা হলে নয়। কোনো মিছিল, মিটিং বা সমাবেশে নয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একদিন জন্ম হয়েছিলো গণপিটুনির। নিশ্চয় কোন মহা অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা গণপিটুনি দিয়েছিলো সেদিন? না, যাকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছিলো দুনিয়ার যে কোনো আইনে তিনি ছিলেন নিরাপরাধ, গ্রাম থেকে লেখাপড়া শিখতে আসা শান্তশিষ্ট্য তুখোড় এক মেধাবী ছাত্র। আর যারা গণপিটুনি দিয়েছিলো তারা কেউ সাধারণ ছাত্র ছিলো না। গণপিটুনির এই দেশে এখন তারা ক্ষমতার শীর্ষে।
বাংলাদেশ অভ্যুদ্যয়ের কিঞ্চিৎ পূর্বক্ষনে ১৯৬৯ এর ১২ আগষ্টের ঘটনা, হ্যা সেদিন গণপিটুনির জন্ম হয়েছিলো l
দেশের উত্তরাঞ্চল বগুড়ার এক গ্রামের গরীব পরিবারের ছেলে ছিলেন আব্দুল মালেক। তিনি রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের আওতায় এস.এস.সি. ও এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় শীর্ষ কৃতি শিক্ষার্থীদের একজন ছিলেন। উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে ব্যাকুল হয়ে, সুদূর গ্রাম ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে, গরীব বাবা-মা'র ভালোবাসার কোল ছেড়ে, শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে এসেছিলেন খ্যাত-আলোকিত সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হয়েছিলেন প্রাণ রসায়ন বিভাগে।
হ্যাঁ, অত্যন্ত সহজ সরল তুখোড় মেধাবী ছাত্র এই আব্দুল মালেককে হত্যার জন্য সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জন্ম হয়েছিলো পণপিটুনির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আব্দুল মালেককে সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি আর রামদার এলোপাথাড়ি ও চতুর্মুখী গণআঘাতে হত্যা করে, লাল সবুজের এ ভূমিতে গণপিটুনির জন্ম দিয়েছিলো তোফায়েলরাl
কি অপরাধে সেদিন তোফায়েলরা গণপিটুনিতে আব্দুল মালেককে মাথার ভিতরে রড ঢুকিয়ে, সারা শরীর থেতলিয়ে রক্তাক্ত করে হত্যা করেছিলো জানেন? যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল প্রগতিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতন্ত্রীরা ধর্মকে আফিম মনে করতো সেখানে একটি মুসলিম দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে তদানিন্তন পাকিস্তানের শিক্ষানীতির উপরে আয়োজিত এক সেমিনারে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর বলিষ্ঠ, যৌক্তিক ও অকাট্য বক্তব্য দিয়ে মিলনায়তনের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে আব্দুল মালেকের সেই ক্ষুরধার যৌক্তিক বক্তব্য সেদিন যারা ধর্মকে আফিম মনে করতো সেই প্রগতিবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রীদের গায়ে যেনো আগুন জ্বালিয়ে দেয়। যুক্তি হারিয়ে জিঘাংসায় উন্মত্ত হয়ে তাই তোফায়েলরা ১২ আগস্ট ১৯৬৯ রড, হকিস্টিক, রামদার আঘাতে আব্দুল মালেককে ধরাশায়ী করে। তোফায়েলদের গণপিটুনিতে জ্ঞানশূন্য অবস্থায় ১৫ আগস্ট ১৯৬৯ আব্দুল মালেক শাহাদাতের পিয়ালা পান করে প্রিয় প্রভুর সাথে মিলিত হন।
আব্দুল মালেককে হত্যার জন্য সেদিন তোফায়েলরা যে গণপিটুনির জন্ম দিয়েছিলো সেই গণপিটুনির প্রশিক্ষনেই তারা আজ পৌঁছে গেছে উন্নতির চরম শিখরে l
যে দেশে গণপিটুনির জনকদের জাতি মন্ত্রী বানায়, সে দেশে গণপিটুনির সয়লাবকে উন্নয়নেরই অংশ মনে হয়।
-ওহিদুল ইসলাম
No comments
Thank You For your Comments.