ধৈর্য্যের মাধ্যমেই মুক্তি মেলে।
عَنْ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَتِّ قَالَ شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ قُلْنَا لَهُ أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُو اللَّهَ لَنَا قَالَ كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللَّهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ أَوْ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ
অনুবাদ: হযরত খাব্বাব ইবন আরাত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) এর নিকটে গেলাম তখন তিনি ক্বাবা শরীফের ছায়ায় বসে আরাম করছিলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না এবং দোয়া করবেন না? (আমরাতো মার খেতে খেতে শেষ হয়ে গেলাম)। আমাদের কথা শুনে রাসূল (সা.) বললেন, তোমাদের আগে যারা এই পৃথিবীতে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে এসেছিল তাদেরকে (সমাজ শক্তি-রাষ্ট্র শক্তি) ধরত, তাদের জন্য জমিনে গর্ত খনন করা হত, এরপর সে গর্তে তাদেরকে গেড়ে দিত, এরপর করাত আনা হত, সে করাত তার মাথার উপরে রাখা হত, এরপর করাত চালিয়ে জিবিত মানুষটাকে চিরে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। এর পরেও তাদেরকে একচুলও আল্লাহর দ্বীন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে লোহার চিরুনী দিয়ে তাদের শরীরের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলা হত, এর পরেও তাদেরকে দ্বীন থেকে সারানো সম্ভব হয়নি। (ও খাব্বাব শোন!) আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, এমন এক সময় আসবে যখন সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত মানুষ চলবে, এ মানুষ গুলোর মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ছাড়া আর কোন ভয় থাকবে না। আর মেষ পালের জন্য বাঘের ভয় ছাড়া কোন ভয় থাকবে না। বরং তোমরা বড্ড তাড়াহুড়ো করছ। (সহীহ আল-বুখারী)
রাবী পরিচিতি
নাম খাব্বাব, পিতা আরাত। তিনি ছিলেন বনু তামিমের সন্তান। অন্য এক গোত্রের আক্রমণে তাঁর গোত্রটি পরাজিত হয়। আক্রমণকারীরা সকল পুরুষদেরকে হত্যা করে এবং নারী ও ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে দাসে পরিণত করে। খাব্বাব (রা.) ছিলেন ছোটদের একজন।
হাত বদল হয়ে তিনি পৌঁছেন মক্কার বাজারে। বনু খুজায়া’র উম্মু আন্মার নামের এক মহিলা তাঁকে ক্রয় করে। উম্মু আন্মার তাঁকে কর্মকারের কাজে নিয়োজিত করে। তিনি কয়লার মধ্যে লোহা গলিয়ে ঢাল, তলোয়ার ও বর্শা তৈরির কাজ করতেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও কর্মঠ তরুণ।
মুহাম্মাদ (সা.) নামক এক ব্যক্তি নতুন দ্বীন প্রচার করছেন জানতে পেরে যুবক খাব্বাব (রা.) মুহাম্মাদুর রাসূল (সা.) এর কাছে গেলেন, তাঁর মুখে আল কুরআনের বাণী শুনে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত খাব্বাব (রা.) প্রথম পাঁচ ছয়জনের পরেই ইসলাম গ্রহন করেন ।
হযরত খাব্বাব (রা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখলেন না। নিঃসংকোচে অন্যদের কাছে দ্বীনের কথা বলা শুরু করেন। কয়েকদিনের মধ্যে এই খবর পৌঁছলো উম্মু আন্মারের কাছে। উম্মু আন্মার তার ভাই সিবা’ ইবনু আবদিল উয্যা ও আরো কয়েকজনকে নিয়ে খাব্বাব (রা.) এর কাছে এসে বলে, ‘তুমি নাকি ধর্মত্যাগী হয়ে বনু হাশিমের এক যুবকের অনুসারী হয়েছ?’ তিনি বললেন, ‘আমি ধর্মত্যাগী হইনি। তবে লা-শারিক আল্লাহ্র ওপর ঈমান এনেছি, মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়েছি এবং সাক্ষ্য দিয়েছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল।’ তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই সিবা’ ও তার সঙ্গীরা নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর ওপর। অনবরত কিল-ঘুষি মারতে থাকে, পা দিয়ে পিষতে থাকে।
একদিন খাব্বাব (রা.) আল্লাহ্র রাসূল (সা.) এর সান্নিধ্য থেকে তাঁর কর্মস্থলে ফিরে আসেন। সেখানে ছিল একদল লোক। তারা যখন জানতে পেল খাব্বাব রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট থেকে এসেছেন, তারা তাঁকে মারতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে এলে দেখেন তাঁর দেহ ক্ষত-বিক্ষত এবং পোষাক রক্তে-রঞ্জিত।
মক্কার মুশরিক নেতাদের নির্দেশে সিবা’ ইবনু আবদিল উয্যা ও তার সাথীরা খাব্বাব (রা.) কে লোহার পোষাক পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দিতে থাকে। প্রচন্ড গরমে তিনি কাতর হয়ে পড়তেন, পিপাসায় ছটফট করতেন। এই অবস্থায় তাঁকে বলা হতো, ‘মুহাম্মাদ সম্পর্কে এখন তোমার বক্তব্য কী?’ দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলতেন, ‘তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নেওয়ার জন্য তিনি আমাদের নিকট এসেছেন।’ আবারো শুরু হতো মারপিট।
ইসলাম গহণ করার অপরাধে তার মনিব উম্মে আনমারের ভাইয়েরা তাকে অকথ্য নির্যাতন করত। তারা হাপরে কতকগুলো পাথর টুকরো গরম করে সেইগুলো বিছিয়ে এবং উত্তপ্ত আগুন তৈরি করে তার ওপর তাঁকে শুইয়ে দিত এবং একজন বলবান ব্যক্তি তাঁর বুকের ওপর পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকত। এই উত্তপ্ত পাথর ও জলন্ত কয়লার আগুনে তাঁর পিঠের গোশত খসে পড়ত, শরীরের রক্ত মাংসগুলো গলে গলে কয়লা ঠান্ডা হয়ে যেত। কয়লার আগুনে ঝলসে গিয়ে তার শরীরে এমন গর্ত হয়েছিল যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই গর্তগুলো পূরণ হয়নি। সেজন্য তিনি সব সময় গায়ের ওপর চাদর জড়িয়ে রাখতেন। মাঝে-মধ্যে উম্মু আন্মার দোকানে এসে হাপরে লোহার পাত গরম করে তাঁর মাথায় ঠেসে ধরত, যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতেন, জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। এত নির্যাতনের পরেও তিনি ইসলাম ত্যাগ করে কুফরে ফিরে যেতে রাজি হননি।
হযরত ওমর (রা.) এর খিলাফতের সময় তিনি খাব্বাব (রা.) এর উপর নির্যাতনের বিস্তারিত জানতে চাইলে হযরত খাব্বাব (রা.) বলেন, ‘আমার কোমরের প্রতি লক্ষ্য করুন।’ হযরত ওমর (রা.) তাঁর কোমর দেখে বলেন, ‘হায় একি অবস্থা!’ তখন খাব্বাব (রা.) বলেন, ‘আমাকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে ধরে রাখা হত, ফলে আমার চর্বি এবং রক্ত প্রবাহিত হয়ে আগুন নিভে যেত ।
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হযরত খাব্বাব (রা.) এর মৃত্যু হয় এবং সাহাবাদের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনিই কুফায় কবরস্থ হন। তাঁর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রা.) তাঁর কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলেন, ‘আল্লাহ খাব্বাবের উপর রহমত করুন। তিনি নিজের ইচ্ছায় মুসলমান হয়েছিলেন, হিযরত করেছিলেন, সমন্ত জিহাদে অংশগহণ করেছিলেন।
প্রেক্ষাপট
রাসূল (সা.) এর উপর সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে আল-কুরআনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে সূরা ফাতিহা নাযিল হয়। এর কিছুদিন পরে সূরা মুদ্দাুিছর এর প্রথম ৭ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ قُمْ فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
“হে বস্ত্রাবৃত! উঠ, অতঃপর সতর্ক কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাকÑপরিুছদ পবিত্র কর। আর অপবিত্রতা বর্জন কর। আর অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না। আর তোমার রবের জন্যই ধৈর্যধারণ কর।” (সূরা মুদ্দাুিছর ১-৭)
এ আয়াত নাযিলের পর রাসূল (সা.) সর্বপ্রথম মা খাদিজার কছে কালিমার দা‘ওয়াত পেশ করলে তিনি কোন প্রশ্ন ছাড়াই বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, “আমি সাক্ষ্য দিুিছ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, আরো সাক্ষ্য দিুিছ মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।” এরপর আবু বকর (রা.) কে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিলে তিনিও দা‘ওয়াত কবুল করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এভাবে গোপনে তিন বছর ইসলামের দা‘ওয়াত চলতে থাকে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সূরা হিজর এর ৯৫ নং আয়াতে রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেন-
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
“সুতরাং তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (সূরা হিজর, ৯৫)
এ আয়াত নাযিলের পর রাসূল (সা.) আরবের নিয়ম অনুযায়ী সাফা পাহাড়ের উপরে উঠে কুরাইশদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করলেন।
আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
صَعِدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الصَّفَا ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ يَا صَبَاحَاهْ فَاجْتَمَعَتْ إِلَيْهِ قُرَيْشٌ قَالُوا مَا لَكَ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ الْعَدُوَّ يُصَبِّحُكُمْ ، أَوْ يُمَسِّيكُمْ أَمَا كُنْتُمْ تُصَدِّقُونِي قَالُوا بَلَى قَالَ فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ فَقَالَ أَبُو لَهَبٍ تَبًّا لَكَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا
“একদিন রাসূল (সা.) সাফায় উঠলেন এবং সবাইকে আহবান করলেন, কুরাইশগণ সেখানে একত্রিত হলো এবং বললো, হে মুহাম্মদ (সা.) তোমার কি হয়েছে? রাসূল (সা.) বললেন, আমি যদি বলি পাহাড়ের বিপরিতে তোমাদের শত্রু লুকিয়ে আছে তোমরা কি বিশ্বাস করবে? তারা সবাই বললো, অবশ্যই বিশ্বাস করব। রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে সতর্ক করছি। এ কথা শুনে আবু লাহাব বলল, ধ্বংস হও তুমি, এ কথা বলার জন্য আমাদেরকে একত্রিত করেছ।” (সহীহ আল-বুখারী)
এরপর থেকে রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শত্রুতা শুরু হয়। মক্কায় ইসলামী দা‘ওয়াতের তৃতীয় পর্যায় যখন মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে শুরু করল, তখন কাফিরদের পক্ষ থেকে রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের উপর যুলুম-নির্যাতনের মাত্রাও চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে থাকল। রাসূল (সা.) কে শি’বে আবি তালিবে বন্দি জীবন-যাপন করতে হলো, সুমাইয়া, খুবাইব, আম্মারসহ বেশকিছু সাহাবীকে শহীদ করা হলো। বেলাল, খাব্বাবের মত সাহাবীদের প্রতি যুলুম-নির্যাতনের মাত্রা চরম সীমায় পৌঁছে গেল এ সময় একদিন হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত (রা.) রাসূল (সা.) এর নিকট গেলেন, রাসূল (সা.) তখন ক্বাবা শরীফের ছায়ায় বসেছিলেন। হযরত খাব্বাব (রা.) বললেন-
أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُو اللَّهَ لَنَا يَا رَسُوْلَ الله-
“হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য চাইবেন না, আমাদের জন্য দোয়া করবেন না?” হযরত খাব্বাব (রা.) এর প্রশ্নের জবাবে রাসূল (সা.) উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।
আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যা
যুগ যুগ ধরে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল তাদের উপর যে যুলুম-নির্যাতন হয়েছে আলোচ্য হাদীসে রাসূল (সা.) সে সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এবং তাঁদের উত্তরসূরী এই পৃথিবীতে দ্বীনে হকের দাওয়াত দিয়েছেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই ইসলাম বিরোধী শক্তি শত্রুতা করেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ
“আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি।” (সূরা ফুরকান, ৩১)
এ আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে যারা ইসলামী আন্দোলনের কাজ করবে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহতে অংশগ্রহণ করবে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবে তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা হবে, যুলুম-নির্যাতন হবে, তাদেরকে শহীদ করা হবে, ঘর-বাড়ী থেকে বিতাড়িত করা হবে। নির্যাতনের মাত্রার সীমা ছাড়িয়ে গেলেও দ্বীনে হকের উপর তারা টিকে থাকবে। রাসূল (সা.) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর যুলুম-নির্যাতনের অতীত ইতিহাস তুলেধরে হযরত খাব্বাব (রা.) কে সে কথায় বলেছেন-
كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ
“তোমাদের আগে যারা এই পৃথিবীতে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে এসেছিল তাদেরকে সমাজ শক্তি-রাষ্ট্র শাক্তি ধরত, তাদের জন্য জমিনে গর্ত খনন করা হত, সে গর্তে তাদেরকে গেড়ে দিত, এরপর করাত আনা হত, সে করাত তার মাথার উপরে রাখা হত, এরপর করাত চালিয়ে জীবিত মানুষটাকে চিরে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। এর পরেও তাদেরকে একচুলও আল্লাহর দ্বীন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে লোহার চিরুনী দিয়ে তাদের শরীরের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলা হত, এর পরেও তাদেরকে দ্বীন থেকে সারানো সম্ভব হয়নি।”
আল্লাহর সার্বভৌম ভিত্তিক ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ করার কারণে পৃথিবীতে অনেক নবী-রাসূলগণকে শহীদ করা হয়েছে, জেল খানায় বন্দি করা হয়েছে, অমানুসিক নির্যাতন করা হয়েছে। যারা তাঁদের উপর ঈমান এনেছিল তারাও রেহায় পায়নাই, তাদেরকেউ অনুরূপ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, এর পরেও তাদেরকে হকের রাস্তা থেকে দূরে সরানো সম্ভব হয়নি। যুগযুগ ধরে নবী-রাসূলগণের প্রতি যুলুম-নির্যাতনের বর্ণনায় আল-কুরআন ঘোষণা করেন-
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ-
“নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মু’মিনগণ বলেছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।” (সূরা আল-বাকারা, ২১৪)
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করার মাধ্যমে জেনে নেন ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।
আল-কুরআনে বার্ণিত হয়েছে-
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ-
“মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যবাদী এবং তিনি এটাও জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আনকাবুত, ২-৩)
ষঢ়যন্ত্রকারীরা সব সময় ষঢ়যন্ত্র করবে, ঈমানদারদের শহীদ করবে, ক্ষতি সাধন করবে কিন্তু তারা বিজয়ী হতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনের আলোকে জ্বালিয়ে রাখবেন।
আল্লাহ বলেন-
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
“তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস-সফ, ৮)
আল-কুরআন থেকে জানা যায়, বড় বড় ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলাম-ইসলামী আন্দোলনকে পৃথিবী থেকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। যেমন-
হযরত ইবরাহীম (আ.) নমরুদকে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিলেন, নমরুদ সহ্য করতে পারল না, রাগান্বিত হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) কে হত্যা করার জন্য অগ্নিককুুন্ড তৈরী করে সে আগুনে তাঁকে ফেলে দিল, আল্লাহ তা'আলা সে আগুনকে ইবরাহীম (আ.) এর জন্য শান্তিদায়ক এবং ঠান্ডা করে দিলেন।
আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانْصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ
“তারা বলল, ‘তাকে আগুনে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবদেবীদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, ‘হে আগুন, ইবরাহীমের জন্য তুমি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।” (সূরা আম্বিয়া, ৬৮-৬৯)
হযরত মুসা (আ.) ফিরাউনকে তাওহীদের দা'ওয়াত দিলেন। ফিরাউন বলল, হে মুসা এতবড় তোমার কলিজায় সাহস আমার ভুখন্ডে দাড়িয়ে তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যকে ইলাহরূপে গ্রহণ করছ? আমি তোমাকে জেলখানায় বন্দি করব।
আল-কুরআনের বাণী-
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ
“ফিরাউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব।” (সূরা শুআরা, ২৯)
হযরত মূসা (আ.) বললেন-
وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
“আর মূসা বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি ফিরাউন ও তার পারিষদবর্গকে দুনিয়াবী জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব, যাতে তারা আপনার পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে।” (সূরা ইউনূচ, ৮৮)
আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধচারণ করার কারণে এই ফিরাউনকে আল্লাহ তা‘আলা চরম শিক্ষা দিলেন। মিসরের নীল দরিয়ার মাঝে তাকে ও তার পারিষদবর্গকে সলিল সমাধি করলেন।
আল্লাহ বলেন-
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফিরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত’।” (সূরা ইউনূচ, ৯০)
এখানেই শেষ নয়, পৃথিবীবাসীর জন্য নিদর্শন ও শিক্ষণীয় হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা ফিরাউনের লাশকে সংরক্ষণ করে রেখে দিলেন ।
আল্লাহ বলেন-
آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
“এখন অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল।” (সূরা ইউনূচ, ৯১-৯২)
যুগে যুগে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। কালের সাক্ষী হিসেবে আজো তা পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে।
আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِينَ فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ وَأَنْجَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
“আর তারা এক চক্রান্ত করল এবং আমিও কৌশল অবলম্বন করলাম। অথচ তারা উপলদ্ধিও করতে পারল না। অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কিরূপ হয়েছে। আমি তাদের ও তাদের কওমকে একত্রে ধ্বংস করে দিয়েছি। সুতরাং ঐগুলো তাদের বাড়ীঘর, যা তাদের যুলমের কারণে বিরান হয়ে আছে। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য যারা জ্ঞান রাখে। আর আমি মু’মিনদের মুক্তি দিলাম এবং তারা ছিল তাকওয়া অবলম্বনকারী।” (সূরা নামল, ৫০-৫৩)
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর পরীক্ষা সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ ، أَنَّهُ قَالَ : عِظَمُ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ ، وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا ، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ-
“হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেন, বিপদ-আপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে তার প্রতিদানও তত মূল্যবান হবে। আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন অধিক যাচাই-বাচাই ও সংশোধনের জন্য তাদেরকে বিপদ-আপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। অতঃপর যারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে খুশি মনে মেনে নেয় এবং ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা এ বিপদ ও পরীক্ষায় আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হয় আল্লাহও তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন। (সূনান আত-তিরমিযি, ইবনে মাজা)
এই বিপদ-আপদ, যুলুম-নির্যাতনের মাঝেও যারা ধৈর্য অবলম্বন করবে, দ্বীনে হকের উপর টিকে থাকবে, জান-মাল দিয়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহতে অংশগ্রহণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
“তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম আবাসগুলোতেও (প্রবেশ করাবেন)। এটাই মহাসাফল্য। এবং আরো একটি (অর্জন) যা তোমরা খুব পছন্দ কর। (অর্থাৎ) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। আর মু’মিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।” (সূরা আস-সফ, ১১-১৩)
উক্ত হাদীসের শেষাংশে রাসূল (সা.) হযরত খাব্বাব (রা.) কে সেই সুসংবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, খাব্বাব এ রাস্তায় মার খাও, শহীদ হও, যুলুম-নির্যাতনে ধৈর্য অবলম্বন করে দৃঢ়তার সাথে ইসলামের পথে টিকে থাক তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তোমরা আল্লাহর সাহায্যে বিজয় অর্জন করবে।
রাসূল (সা.) বললেন-
وَاللَّهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ أَوْ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ
“(ও খাব্বাব শোন!) আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, এমন এক সময় আসবে যখন সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত মানুষ চলবে, এ মানুষ গুলোর মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ছাড়া আর কোন ভয় থাকবে না। আর মেষ পালের জন্য বাঘের ভয় ছাড়া কোন ভয় থাকবে না। বরং তোমরা বড্ড তাড়াহুড়ো করছ।”
উপরিউক্ত হাদীস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে গেলে বিপদ-মুসিবত, যুলুম-নির্যাতন আসবে। এ অবস্থায় আল্লাহর পথে দৃঢ়তার সাথে টিকে থাকতে হবে, ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে তিনি যেন আমাদেরকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেন।
আমীন।
মাওলানা হাবিবুর রহমান
লেখকঃ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ
No comments
Thank You For your Comments.