বাংলাদেশ তোমায় মুজিবেই থামতে হবে! - ফারজানা মাহবুবা
অনেকেই বলতো, বাংলাদেশ খুব কিউট একটা দেশ
বাংলাদেশীরা খুব কিউট একটা জাতি।
প্রথমদিকে অনেকদিন বুঝিনি এই কিউট বলতে কী বুঝাচ্ছিলো সবাই।
পরে বুঝেছিলাম।
এখন আমারো মনে হয়, আমরা ভীষন রকম কিউট একটা জাতি! আসলেই।
দেখলাম, একজন খুব আবেগপ্রবন ভাষায় সৌদি'র রাজার সাথে শেখ মুজিবের কথোপকথন নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে।
লিখেছে মুজিব নাকি বাংলাদেশকে "ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ" নাম দিতে অস্বীকৃতি জানানোতে সৌদি রাজা রাগ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি!
কী ভীষন কিউট!
মানুষজন এখনো এগুলো গিলে?!
সিরিয়াসলি?!
ইতিহাসকে কী চমৎকার করে নিজেদের ইচ্ছেমত গল্প বানিয়ে ফেলে এরা!
রাজনীতি জানা লাগে না,
একটু গুগল আর উইকি ঘাটলেই যে কেউ জেনে যাবে পাকিস্তানের চাপে পড়ে শুধু সৌদি না, চায়না-ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি।
চায়না কখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে জানেন?
৩১ অগাষ্ট ১৯৭৫!
মুজিব খুন হওয়ার ঠিক পনের দিন পর!
ডিয়ার কিউটেষ্ট মানুষজন,
চায়না'র সাথে মুজিবের কোনো কথোপকথন হয় নাই "ইসলামিক রিপাবলিক অফ চায়না"র অনুকরনে "ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ" নাম রাখা না রাখা নিয়ে?!
নিশ্চয়ই হয়েছে।
কেউ লিখতে ভুলে গিয়েছে।
প্লীজ কিউট রাইটারেরা,
ইতিহাস লিখলে পুরা লিখেন।
আপনারা সৌদি'র সাথে কথাবার্তা লিখেছেন, কিন্তু চায়না'র সাথে কথোপকথন বাদ দিয়েছেন,
আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
ঐ 'কিউট' স্ট্যাটাস রাইটার আরো কিউট করে লিখেছে,
হে বাংলাদেশ, তোমাকে মুজিবে এসে থামতে হবে।
তোমাকে মুজিবকে শিখতে হবে।
সামথিং লাইক দিস।
কথাটা কিন্তু ঠিক। একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট ঠিক।
আমি এর সাথে পুরোপুরি সহমত।
এই কিউট জাতি মুজিবে থামতে না শিখে ৭৫ এর ১৫-ই অগাষ্ট বানিয়ে ফেলেছিলো।
মুজিবের মেয়ে হাসিনা,
এই জাতি তখন থামতে শিখেনি।
তুমি এখন ওদেরকে থামা শিখিয়ে দাও।
ওদেরকে থামতেই হবে!
এই কিউট জাতি
যারা এখনো গল্প লেখা ইতিহাস বিশ্বাস করে মুজিবেই এসে থামতে চায়,
আমতা আমতা করে বলে 'মুজিব কিন্তু খারাপ ছিলো না! ও বাধ্য হইছিলো',
আহারে, কিউট জাতি'র কিউট ইতিহাস!
এদেরকে থামাতেই হবে।
মুজিবে না হোক
হাসিনাতে এসে হলেও এদেরকে থামতে হবে।
এই কিউটনেস আর বাড়তে দেয়া যায় না।
এজন্যেই ক্ষমতার শুরুতেই
২০০৯ এর জানুয়ারীতে ক্ষমতায় এসেই থামানোর শুরু হয়ে গিয়েছে ফেব্রুয়ারীতেই!
আর্মি'র যত প্রতিবাদী সৎ অফিসার ছিলো,
একদম সাসপেন্স মুভি স্টাইলে সবাইকে এক জায়গায় করে গণহারে খুন করে ফেললো তাদেরকে!
আর্মি'র ষোলটা সেক্টরের প্রত্যেকটা কমান্ডার সহ
তেষট্টিজন আর্মি'র বাঘকে দিন দুপুরে পুরো কিউট জাতিটার সামনে
থামিয়ে দিলো হাসিনা।
শুধু আর্মিকে খেয়েই তো পেট ভরে না,
তাদের বউ বাচ্চা সহ আরো প্রায় বিশজন ক্যাজুয়ালটিকেও খেয়ে ফেলা হলো
ছিঁড়ে ফেলা হলো
বেয়নেট দিয়ে চার্জ করে করে পাকি সেনাদের স্টাইলে মাটিতে পুঁতে ফেলা হলো
ড্রেইনে ফেলে দেয়া হলো
কুত্তাকে দিয়ে খাওয়ানো হলো!
একদম ঠিক হলো।
এভাবেই এই কিউট জাতিকে থামাতে হয়।
আমি একদম সহমত।
'বিডিআর বিদ্রোহ' তত্ত্বে বিশ্বাসী এই কিউট জাতিকে এইভাবেই থামাতে হয়, যারা কিনা যা গল্প তাদেরকে খাওয়ানো হয় তাইই খায়!
গল্পভূক এক কিউট জাতি!
কিন্তু প্রেস আর মিডিয়া তো গল্পে দমে না।
অতএব দৃষ্টান্তমূলক একটা কিছু তো লাগবে।
সাগর রুনিকে এমন নির্মমভাবে তাদের বেডরুমে ছুরির পর ছুরি দিয়ে আঘাত করে
কোপের পর কোপ দিয়ে
এমনভাবে খুন করা হলো
যেন আর কোনো সাংবাদিক বা প্রেস-মিডিয়ার কেউ ভুলেও/ স্বপ্নেও হাসিনা বাহিনীর গল্পে অবিশ্বাস না করে!
বাকী থাকলো বিরোধী দল।
বাংলাদেশে একটিভ/ রিয়েল বিরোধী দল ছিলো একটাই।
জামাত।
বিএনপি যে লেজ কাটা হনুমান
এক খালেদা'র চেহারা দেখিয়ে দেখিয়ে বেঁচে আছে
ছ্যাঁচড় তারেক জিয়া যে বাপের নাম বিক্রি করে করে টিকে আছে
তা- তো এই কিউট জাতিও বুঝে।
অতএব আর্মি এবং প্রেস এর পরে এবার জামাতকে থামাও।
কীভাবে?
ইজি পিজি!
কিউট জাতিকে নতুন এক ৭১-ভার্সন শেখানো হলো।
কিউট জাতিও সেই নতুন নতুন ৭১ গল্পে বিমোহিত!
আহা, বুক ভরা তাদের ৭১!
ব্লগে গল্প!
সোশাল মিডিয়ায় গল্প!
টিভিতে গল্প!
পত্রিকায় গল্প!
গল্পগুলো এতই আবেগী
চোখে পানি এসে যায় কিউট জাতির।
বুকে জ্বলে উঠে প্রতিশোধের আগুন।
শুরু হয় মহা উৎসব,
ফাঁসির, খুনের আর গুমের মহা উৎসব!
RAW সরাসরি বাংলাদেশের DGFI, RAB, পুলিশ, বিডিআর (কী যেন নতুন একটা নাম দিয়েছে এদের!), আর খোঁজা বানিয়ে ফেলা আর্মিকে ট্রেনিং দেয়া শুরু করলো।
তাদের সার্ভেলেন্স সিষ্টেম ব্যবহার করে জামাত আর শিবিরের একট একটা করে নেতা কর্মীদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে এইদার স্পট কিলিং করা হলো
অথবা গুম করে ফেলা হলো।
কীভাবে খুন আর গুম করতে হয়
তাকে পুরো আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গেলো হাসিনা বাহিনী।
এই বাহিনীতে যে যত গুম-খুন শিল্পে বড় শিল্পী
তার প্রমোশন তত দ্রুত হতে থাকলো।
এভাবেই এই কিউট জাতিকে থামাতে শেখালো মুজিবের মেয়ে হাসিনা।
কিন্তু এই কিউট জাতির আন্ডা পান্ডা বাচ্চাগুলো খুব বেয়াদ্দব!
বেয়াদ্দব পোলাপাইন থামতে জানেনা।
কত বড় সাহস!
হাতি ঘোড়া গেলো তল
মশা বলে কত জল!!
আর্মি খেয়ে ফেলেছে
প্রেস খেয়ে ফেলেছে
বিরোধী দল খেয়ে ফেলেছে
আর এই স্কুলের পোলাপাইন আসছে এখন চ্যালেঞ্জ করতে?!
অতএব মশাকে মশার মতই মারতে হয়।
মশাকে মশার মতই থামাতে হয়।
দুই হাতের তালিতে একদম পিষে ফেলে।
মুজিবের মেয়ে হাসিনা তালি দিলো।
স্কুলের মশা মশা পিচ্চি পোলাপাইন পিষে গেলো।
শুধু তারাই না
তাদের মাদেরকে ঘরতে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো
বাবাদেরকে কাজ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো
আর যারা সামান্যতম টুঁ শব্দটিও করেছিলো
ভুল করে আবেগী হয়ে একটা হয়তো ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বসেছিলো
তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে রিমান্ডে দিয়ে দেয়া হলো।
অবশেষে কফিনের লাষ্ট পেরাকটা মারতে
গত দুইদিন ধরে যত এক্স-আর্মি-পার্সোনেল আছে
যাদের মধ্যে "দূর ভবিষ্যতে বিদ্রোহ করার এক চাল সমান সম্ভাবনাও আছে"
তাদেরকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অবশেষে এভাবেই একটা কিউট জাতির কিউট গল্পের সমাপ্তি।
এবার আসুন সবাই সুর করে গল্প গাই
বাংলাদেশ তোমাকে মুজিবেই থামতে হবে।
মুজিবে না থামলে তোর বাপ মা চৌদ্দ গোষ্ঠীকে তুলে নিয়ে গিয়ে তোকে হাসিনাতে এসে হলেও থামানো শেখাবো, কিউট কোথাকার!
#Bangladesh
-----
***বাংলাদেশে যারা আছেন তারা কেউ আমার বা অন্য কারো রাজনৈতিক পোষ্টে লাইক দিবেন না বা শেয়ার করবেন না। আপনার নিরাপত্তা এখন ফার্ষ্ট প্রায়োরিটি।
প্রতিবাদের ভাষা হোক চিহ্নবিহীন। আপনাকে যেন কোনোভাবেই কেউ ট্রেক করতে না পারে। কারন কেউ বেঁচে না থাকলে প্রতিবাদ করবে কে? ভূতে?
বেঁচে থাকুন।
Written by
Farjana Mahbuba
No comments
Thank You For your Comments.