কারাগারে নেত্রী, তারেক রহমানের যাবজ্জীবন; বিএনপির ভবিষ্যত কি?
বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে পুরো দেশ জুড়ে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বর্তমান নেত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্বের সুনাম রয়েছে সর্বত্র। বিভিন্ন সময়ে দলটি দেশ পরিচালনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০১-০৬ শাসনামলে দেশের অর্থনীতি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো দলটি।
কিন্তু বিচক্ষণ নেতৃত্বের অভাবে সে সুফল ধরে রাখতে পারেনি বিএনপি। দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতার বাহিরে। বিরোধীদল হিসেবেও তেমন আশানুরূপ ভুমিকা রাখতে পারতেছে না। বিপুল জনসমর্থনের এ দলটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরনে সাম্প্রতিক অনেকটাই ব্যর্থ। আওয়ামী সরকারের দমন পীড়নে অনেকটাই নাজেহাল অবস্থা।
একসময় যারা ঢাকাকে শাসন করেছে। যাদের ইশারায় ঢাকার অলিগলি নিয়ন্ত্রন হতো তারা আজ গা ঢাকা দিয়েছেন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ ও অকেজো প্রমাণিত হয়েছেন।
বিএনপিতে আসা বেশির ভাগ নেতারা ব্যবসায়ী বা অন্য দল থেকে এসেছে। যার কারণে রাজনৈতিক ময়দানে তারা কখনো রিস্ক নিতে একেবারেই নারাজ। নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য ও পরিবার রক্ষায় সরকারের সাথে আতাঁত করতে তারা দ্ধিধাবোধ করেন না। যার ফলে দিন দিন বিএনপি একটি মেরুদন্ডহীন রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছে।
রাজনীতিতে পরনির্ভর হয়ে পড়েছে বিএনপি। জোট ছাড়া যেন কোন গতি নেই। কোন আন্দোলন শরিক দল ছাড়া জমাতে পারছে না বিএনপি। দলের কিছু দালাল নেতাদের কারণে শরিকদের সাথেও তেমন মিল নেই দলটির। পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝি হরহামেশা লেগেই আছে।
নেত্রী কারাগারে অনেকদিন হলো। নেত্রী মুক্তির দাবীতে উল্লেখযোগ্য কোন আন্দোলন দেখাতে পারেনি বিএনপি। বক্তিতা বিবৃতিতেই ক্লান্ত যেন এ রাজনৈতিক দলটি।
সাম্প্রতিক ২১আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় হলো। বিএনপি আমলের প্রভাবশালী মন্ত্রী বাবরের ফাসি রায় হলো, তারেকের যাবজ্জীবন। তাহলে এ অবস্থায় কে নেতৃত্ব দেবে এ দলটিকে? বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবারের কেউ না থাকলে দলটির কি অবস্থা হতে পারে তা বিভিন্ন সময়ে সেসকল দলগুলো টের পেয়েছে। দলে যারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মত চরিত্রের লোক। তাদের দিয়ে নেত্রীর মুক্তি বা সরকার পরিবর্তন কতটা সম্ভব তা ইতিমধ্যে দেশবাসী বুঝতে পেরেছে।
এভাবে চলতে থাকলে দেশের ভাগ্য কি লিখা আছে উপরওয়ালা ভালো জানেন। দেশের গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, একদলীয় শাসনব্যবস্থা সুদৃড় হচ্ছে দিনের পর দিন। বিরোধী মত গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের স্বার্থ ভুলন্ঠিত হচ্ছে বার বার। অর্থনীতি আর ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এ দেশের সাধারণ জনগণকে।
বিএনপিকে ঘুর দাড়াতে হবে। নতুবা এ অবস্থা থেকে উত্তরণের দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। সাধারণ মানুষের অাস্থার যথাযথ প্রত্যাশা পূরণ বিএনপিকেই করতে হবে। রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন, নেতৃত্বের সংস্কার ও বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন ছাড়া ক্ষমতায় আসা অনেকটা অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক লবিং আরো জোরদার করা সময়ের দাবী। বাংলাদেশে ভারতের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কমানোর জন্য ভিন্ন কোন শুভাকাংখী খুজতে হবে বিএনপিকে। বিশিষ্টজনের সাথে মতবিনিময় করে একটি জাতীয় ঐক্য সময়ের দাবী। যদিও সাম্প্রতিক জাতীয় ঐক্যটি অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। সেখানেও পক্ষপাতিত্ব ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। দেশ রক্ষায় সকল রাজনৈতিক এক্যের অংশগ্রহন সময়ের দাবী। কাউকে বাদ দিয়ে নয় সবাইকে সাথে নিয়েই এ অপশাসনের মোকাবেলা করতে হবে।
বিএনপির প্রতি এদেশের মানুষের এখনো অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। এ প্রত্যাশা পূরণে বিএপিকে আরো বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। আরো কৈৗশলী রাজনৈতিক নীতি তৈরি ও প্রয়োগ করতে হবে। বেশিদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকলে দলটি নেতাকর্মী সংকটে পড়বে। কারণ ক্ষমতা নির্ভর দলগুলো ক্ষমতার বাহিরে থাকলে দল নিঃশেষ হয়ে যায়।
No comments
Thank You For your Comments.