শিল্পকলাঃ মানবদেহের নিদর্শন- যে নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনেছে
অর্থঃ যে নিদর্শন তোমাদের মধ্যে আছে তোমরা কি তা দেখ না?
এ স্থলে নিদর্শনাবলীর বর্ণনায় আকাশ ও শূন্য জগতের সৃষ্ট বস্তুর কথা বাদ দিয়ে কেবল ভূ-পৃষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা মানুষের খুব নিকটবর্তী এবং মানুষের ওপর বসবাস ও চলাফেরা করে। আলোচ্য আয়াতের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী, খোদ মানুষের ব্যক্তিসত্বার প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ভূ-পৃষ্ট ও ভূ-পৃষ্টের সৃষ্ট বস্তু বাদ দাও, খোদ তোমাদের অস্তিত্ব তোমাদের দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যেঙ্গের মধ্যেই চিন্তা-ভাবনা করলে এক একটি অঙ্গকে আল্লাহ তায়ালার কুদরতের এক একটি পুস্তক দেখতে পাবে। তোমরা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে যে সমগ্র বিশ্বে কুদরতের যেসব নিদর্শন রয়েছে সেই সবই যেন মানুষের ক্ষুদ্র অস্থিত্বের মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে বিদ্যমান রয়েছে।
এ কারনেই মানুষের অস্তিত্বকে ক্ষুদ্র জগৎ বলা হয়। অ্যানাটমিক্যাল সাইন্সের বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন মানুষের শরীরে যত ক্ষুদ্র শিরা -উপশিরা আছে যদি তা একত্র করে লম্বা করা হয় তাহলে এটি বিশাল পৃথিবীকে তিনবার পেচানো যাবে বলে মত পোষন করেছেন। শুধু তাই নয় এই শিরা-উপশিরা যদি একত্রে পাশাপাশি সাজানো হয় তাহলে তিন একর জমির প্রয়োজন হবে। আমি কোরআনের আয়াতের অর্থ ক্যালিগ্রাফি শিল্পের ভাব-অর্থ অ্যানাটমিক্যাল সাইন্সের মাধ্যমে বিষয় ভিত্তিক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যে কিভাবে মানুষের অঙ্গে শিরা-উপশিরাগুলো সাজানো থাকে একটি রগকে কেটে অনুবিক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ১৮ হাজার গুন বড় করে কিভাবে তার ভিতর ক্ষুদ্র নালীগুলো সাজানো থাকে। নালীগুলোর অবস্থান এত সুন্দর ডিজাইন ও কারুকার্যময় যে না দেখলে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব না।
শুধু কি তাই মানুষের হৃৎপিন্ড কম্পিউটারের সাহায্যে বড় করে দেখা গেছে যে সেখানে আল্লাহ লেখার অস্তিত্ব বিদ্যমান। যা আল্লাহ শব্দে প্রতিফলিত হয়ে সারা দেহে রক্তে সঞ্চালিত হয়। আর দেহ থাকে সঞ্জিবীত। সে জন্যই আল্লাহর জিকির দ্বারাই আত্মা পরিতৃপ্ত হয়। যা এই আধুনিক বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলে। আমি শিল্পের মাধ্যমে হলেও কিছুটা ধারণা দিয়েছি মাত্র। প্রকৃত ব্যাখ্যা দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব না। তাই সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টান্ত মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে স্থান লাভ করেছে।
মানুষ যদি তার জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবস্থা পর্যালোচনা করে, তবে আল্লাহ তায়ালাকে যেন সে সৃষ্টির সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে। কিভাবে এক ফোঁটা বীর্য বিভিন্ন ভূ-খন্ডের খাদ্য ও বিশ্বময় ছড়ানো ক্ষুদ্র উপাদানের নির্যাস হয়ে গর্ভাশয়ে স্থিতিশীল হয়? অতঃপর কিভাবে বীর্য থেকে একটি জমাট রক্ত থেকে মাংসপিন্ড প্রস্তুত হয়। তারপর কিভাবে তাতে অস্থি তৈরি হয় এবং অস্থিকে মাংস পরানো হয়? তারপর কিভাবে এই নিস্প্রাণ পুতুলের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয়ে এবং পূর্ণাঙ্গরূপে সৃষ্টি করে তাকে দুনিয়ার আলো বাতাসে আনয়ন করা হয়। এরপর কিভাবে এ জ্ঞানহীনও চেতনাহীন শিশুকে একজন সুধী ও কর্মঠ মানুষে পরিণত করা হয় এবং কিভাবে মানুষের আকার আকৃতিতে বিভিন্ন রূপ দান করা হয়েছে যে, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে একজনের চেহারা অন্যজনের চেহারা থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র দৃষ্টিগোচর হয়।
এই কয়েক ইঞ্চির পরিধির এমন এমন স্বা্তন্ত্র্য রাখার সাধ্য কার আছে ?
এরপর মানুষের মন ও মেজাজের বিভিন্নতা সত্বেও তাদের একত্ব সেই আল্লাহ তায়ালার কুদরতের লীলা যিনি অদ্বিতীয় ও অনুপম। এসব বিষয়ে প্রত্যেক মানুষ বাইরে ও দূরে নয় স্বয়ং তার অস্তিত্বের মধ্যেই দিবারাত্র প্রত্যক্ষ করে। এরপর যদি সে আল্লাহ তায়ালাকে সর্ব শক্তিমান স্বীকার না করে তবে তাকে অন্ধ ও অজ্ঞান বলা ছাড়া উপায় নাই। এ কারনেই আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছে যে, ‘আফালা তুবসিরুন’, অর্থাৎ তোমরা কি দেখ না? এতে ইঙ্গিত আছে যে, এ ব্যাপারে তেমন বেশি জ্ঞান বুদ্ধির দরকার হয় না। দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকলেই এই সিন্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়। এজন্যই হাদীসে আছে যে, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনতে পেরেছে’।
লেখকঃ আমিনুল ইসলাম আমিন
বিশিষ্ট ক্যালিগ্র্রাফার
বাংংলাদেশ।
No comments
Thank You For your Comments.