adsterra.com

‘ক্রসফায়ার’ থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ পাল্টেছে নাম পাল্টে গেছে টার্গেট !



‘ক্রসফায়ার’ থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ পাল্টেছে নাম পাল্টে গেছে টার্গেট
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তছনছ করে এক প্রহসনের মাধ্যমে দেশের জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। গত ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলগুলো এটাকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়া হয় ২০ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াকে। কিন্তু বালুর ট্রাক দিয়েতো আর সারা বাংলাদেশ আটকানো সম্ভব নয়; ফুসে ওঠে সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদমুখর এই মানুষের ওপর শুরু হয় সন্ত্রাস দমনের নামে নিষ্ঠুর সরকারি দমনাভিযান যা সব পাষন্ডতাকে হার মানিয়েছে। গুম, খুন, গণহত্যা, গণগ্রেফতার, রিমান্ড, কারানির্যাতন, বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, পেট্রলবোমা সন্ত্রাস, মহিলা ও শিশুদের ওপর হামলা, ক্রসফায়ারের নামে মেধাবী ছাত্রহত্যার মাধ্যমে সারাদেশে সৃষ্টি হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়।

বিগত পাঁচ বছর ধরে চালানো গ্রেফতার নির্যাতন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে নতুন আকার ধারণ করে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে সারাদেশে শুরু হয় সাঁড়াশি গণগ্রেফতার। বাসা-বাড়ি, দোকান, অফিস, রাস্তা-ঘাট, যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে গ্রেফতার করা হচ্ছে নির্বিচারে- শুধু তাই নয়, গত দেড় মাসে বিরোধী দলের প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ৮ শতাধিক মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখের অধিক নেতাকর্মীসহ নিরীহ মানুষকে। ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে ২০ হাজারের বেশি, আর বাকিরা পলাতক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারাগারগুলোতে মানবিক বিপর্যের আশঙ্কা করছেন অনেকে। গ্রেফতারকৃত অনেককে আবার অত্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করছে খোদ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।

এখন পাল্টে গেছে ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ধরন। আগে যেখানে পেশাদার সন্ত্রাসীরা নিহত হতো, এখন সেখানে নিহত হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এবং একই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ‘গাড়িচাপায়’ নিহতের অবাস্তব দাবি করা হচ্ছে।
৫ জানুয়ারি ২০১৫  থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাব, যৌথবাহিনী এবং আওয়ামী লীগের অস্ত্রের আঘাতে নিহত ৫৪ জনের তালিকা :

১. রাকিব মুন্সি
গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে নাটোর শহরের তেবাড়িয়া মোড়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের একটি দল বিএনপির কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই মারা যান নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদল ক্রীড়া সম্পাদক রাকিব মুন্সি। তার পিতার নাম চান মিয়া। তিনি বিবিএ (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

২-৩. রায়হান আলী ও মজির উদ্দীন
গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে নাটোর শহরের তেবাড়িয়া মোড়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের একটি দল বিএনপির কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই মারা যান সিংড়া থানা ছাত্রদল কর্মী রায়হান আলী। রায়হানের পিতা দেলোয়ার হোসেন একজন দিনমজুর।
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিএনপির মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, পুঠিয়া উপজেলার কর্মী মজির উদ্দীন মারা যান। তার পিতার নাম খবির উদ্দীন। তিনি রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।

৪. জমশেদ আলী
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করতে গেলে ২০ দলের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলবর্ষণ করলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির শিবগঞ্জ উপজেলা কর্মী জামশেদ আলী নিহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিবাসী জামশেদ আলীর পিতার নাম মন্তাজ আলী।

৫. মিজানুর রহমান
৭ জানুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জাতীয়তাবাদী যুবদল সেনবাগ উপজেলার কর্মী মিজানুর রহমান রুবেল। তার পিতার নাম তোফায়েল আহমেদ।

৬ . মহসিন উদ্দিন
৭ জানুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের খরশেদ বাবুর্চির পুত্র মহসিন উদ্দীন। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন।

৭. জুবাইরুল ইসলাম
১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া চুনতি ফরেস্ট গেট, এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীর অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন ছাত্রশিবিরের সাথী জুবাইরুল ইসলাম। তার পিতার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মহসিন কলেজের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী ছিলেন।

৮. মোরশেদ আলম পারভেজ
১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আবিরপাড়া গ্রামের তিনতেড়ী এলাকায় যুবলীগের ক্যাডার জাকির হোসেন সোনাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মোরশেদ আলম পারভেজকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই সোনাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের পুত্র পারভেজ মারা যান।

৯. মতিউর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি মতিউর রহমান ও আরও দুই বিরোধীদলীয় কর্মীকে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা ১৫ জানুয়ারি তুলে নিয়ে যায়। ১৬ জানুয়ারি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত মতিউরের লাশ উদ্ধার করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে। মতিউর বাজিতপুর গ্রামের আনসার আলীর পুত্র।

১০. সিরাজুল ইসলাম
১৮ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার শঙ্করচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার এবং বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামকে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটে ব্রিজের কাছে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। তাঁর সাথে থাকা দুই সঙ্গীকেও উপর্যুপরি কোপানো হয়। সিরাজুল ছয়ঘরিয়া গ্রামের কাঙ্গালী মন্ডলের ছেলে।

১১. ইমরুল কায়েস
১৭ জানুয়ারি নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও স্থানীয় জামায়াত নেতা। ইমরুল কায়েসকে (৩৮) ঢাকার ওয়ারী থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। ১৯ জানুয়ারি রাত ৩টায় কথিত ক্রসফায়ারে তাঁকে হত্যা করা হয়। নিহতের শরীরে খুব কাছ থেকে দশটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তার পিতার নাম আনোয়ার হোসেন।

১২. মোহাম্মদ এসলাম
রাজশাহী জেলায় গোদাগাড়ী উপজেলার রিসিকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ এসলামকে গত ১৯ জানুয়ারি গোদাগাড়ীতে পিকেটিং চলাকালে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাকে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দিয়ে রহস্যজনক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হিসেবে প্রচার করে। তিনি অলকছাত্রা গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে।

১৩. নুরুজ্জামান জনি
ঢাকার খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি ১৯ জানুয়ারি ছোট ভাই মনিরুজ্জামানের সাথে দেখা করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে গেলে সেখান থেকে ডিবির একটি দল তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ২০ জানুয়ারি মধ্যরাতে উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল খিলগাঁও এলাকায় একটি সাজানো ক্রসফায়ারের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করে। জনির শরীরে সর্বমোট ১৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ইয়াকুব আলীর ছেলে জনি বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী মুনিরা পারভীন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

১৪. সোলাইমান উদ্দিন জিসান
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের মৃত আবু বকরের পুত্র এবং লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক জিসান ২২ জানুয়ারি ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে লক্ষ্মীপুর যাওয়ার পথে পুটিয়া পৌঁছালে র‌্যাবের একটি দল তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে জিসান ঘটনাস্থলেই মারা যান।

১৫. মো. জিল্লুর রহমান ভান্ডারি
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার যুবদলের কর্মী মো. জিল্লুর রহমান ভান্ডারি গত ২২ জানুয়ারি রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তিনি একই উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের খামারিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম প্রকাশ লেদুর ছেলে।

১৬. আবুল কালাম
ভোলা সদর উপজেলার মৃত খোরশেদ আলমের পুত্র গাড়িচালক আবুল কালাম ৩৫ দিন যাবৎ নিখোঁজ থাকার পর গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার রামপুরায় বনশ্রী এলাকাতে র‌্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন।

১৭. সুলতান আলী বিশ্বাস
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কুসুমবাড়ী গ্রামের হাশেম আলী বিশ্বাসের পুত্র নির্মাণশ্রমিক সুলতান আলী বিশ্বাস ৩৫ দিন যাবৎ নিখোঁজ থাকার পর গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার রামপুরায় বনশ্রী এলাকাতে র‌্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন।

১৮. আসাদুল্লাহ তুহিন
ইসলামী ছাত্রশিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখার সভাপতি আসাদুল্লাহ তুহিন ২৬ জানুয়ারি র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার ১৩ ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে তাকে নিয়ে র‌্যাবের ভাষ্যানুযায়ী ককটেল উদ্ধারে যায় র‌্যাব-৫। ২৭ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়কে সদর উপজেলার লালাপাড়া মোড়ে ট্রাক চাপা দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন। চরমহনপুর চক পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল্লাহ তুহিনের পিতার নাম মো. এনামুল হক।

১৯. নূরুল ইসলাম শাহীন
রাজশাহীর ইসলামিয়া কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক বিনোদপুরের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম শাহীনকে ২৭ জানুয়ারি রাতে শহরের পদ্মা অফসেট প্রেস থেকে আটক করে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের নামে যৌথবাহিনী হত্যা করে। তিনি রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের ৩০ নং ওয়ার্ড সাবেক সেক্রেটারি।

২০. হারুন অর রশিদ
ভোলার চরফ্যাশন ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি হারুন অর রশিদ ২৫ জানুয়ারি আলনূর মসজিদে অনুষ্ঠিত আরাফাত রহমান কোকোর মিলাদ মাহফিলে যোগ দেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ও তার বাহিনী ধারালো অস্ত্র দিয়ে ২৬ জানুয়ারি রাতে মাদ্রাসার সামনে চৌরাস্তা বাজারে প্রকাশ্যে হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় হারুনের মা ছেলেকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৭ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

২১. রফিকুল ইসলাম
সাতক্ষীরা জেলায় তালা উপজেলার নোওয়া কাটি গ্রামের রফিকুল ইসলামকে পুলিশ ডাকাত সন্দেহে গ্রেফতার করে এবং ২৭ জানুয়ারি সাজানো ক্রসফায়ারে হত্যা করে।

২২. আসিফ পারভেজ টুকুন
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ছাত্রদলের সদস্য ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী আসিফ পারভেজ টুকুনকে ২৮ জানুয়ারি কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।

২৩. আইনুর রহমান মুক্তা
রাজশাহী মহানগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনুর রহমান মুক্তাকে ২৮ জানুয়ারি উপশহর এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর থানায় এনে নির্যাতন করা হয়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ঐদিন বিকেলে আদালতে তুলে জেলে প্রেরণ করা হয়। জেলের মধ্যে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে রামেক হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

২৪. সাকিবুল ইসলাম
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদরাসার ছাত্র ও ছাত্রশিবির কর্মী সাকিবুল ইসলাম ২০ জানুয়ারি রাতে টিউশনি থেকে ফেরার পথে কদমতলীতে বোমা হামলার শিকার হয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে ২৪ জানুয়ারি নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল সেন্টারে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে ২৬ জানুয়ারি রাতে তাকে ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে ২৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান। সাকিবুল ইসলাম চট্টগ্রাম লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা গ্রামের মৃত ওসমানুল হকের ছোট ছেলে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।

২৫. আরিফুল ইসলাম মুকুল
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, ঢাকা ক্যাম্পাসের আইন বিভাগের ছাত্র আরিফুল ইসলাম মুকুলকে ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সদরঘাটে ভোলার চরফ্যাশনগামী কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আরিফুলকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার লাশ পাওয়া যায় রূপনগর থানার গোড়ান চটবাড়ী বেড়িবাঁধ সড়কের ঢালে।

২৬. আব্দুস সামাদ মোল্লা
যশোরের চৌগাছা উপজেলার বিএনপি কর্মী এবং দিঘড়ি গ্রামের মৃত নেহাল মোল্লার ছেলে আব্দুস সামাদ মোল্লাকে গত ২৯ জানুয়ারি স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার আব্দুল আজিজের ছেলে মনি, লালের ছেলে বাবুল ও তাদের সঙ্গীরা তিনটি মোটরসাইকেলযোগে মাসিলা বাজার থেকে সামাদকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরের দিন ৩০ তারিখ সকালে পুলিশ চৌগাছা পৌরসভার পান্টিপাড়ার চাল ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানের ভাড়া দেওয়া বাড়ির থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।

২৭. এমদাদ উল্লাহ
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিম ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি, ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র এমদাদ উল্লাহকে (২৩) ৩১ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পুলিশ  গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে রাতের বেলায় অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলে ক্রসফায়ারে তাকে হত্যা করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। তার পিতার নাম মো. জামাল উদ্দিন।

২৮. সাইদুল ইসলাম
সিরাজগঞ্জ জেলায় উল্লাপাড়ার সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি ও বাকুয়া গ্রামের বাছের প্রামাণিকের ছেলে সাইদুল ইসলাম ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পুলিশের অভিযান চলার সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ফেব্রুয়ারি ভোরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান।

২৯-৩০. ইউসুফ আলী ও লিটন হোসেন
৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোররাতে যশোর-মনিরামপুর সড়কের মনিরামপুরের কুয়াদা এলাকার ব্যাগারিতলায় নিহত হন ইউসুফ আলী (২৭) ও লিটন হোসেন (২৮)। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তরকারি ব্যবসায়ী ইউসুফ ও লিটনকে পুলিশ পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার পর ট্রাক চাপা দিয়েছে। তারা দু’জন মনিরামপুর বাজারের কাঁচামাল আড়ত ‘কেশবপুর ভান্ডার’-এ ব্যবসা করতেন। ইউসুফ মনিরামপুর উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। লিটন দুর্গাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে।

৩১ . সাখাওয়াত হোসেন রাহাত
৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যাত্রাবাড়ীতে মাতুয়াইলের কাঠের পুল এলাকায় র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাখাওয়াত হোসেন রাহাত নিহত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি, দুপুরে সাখাওয়াত হোসেন রাহাতকে শনাক্ত করেন তার খালাতো ভাই রিপন ও বন্ধু শরীফ। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার রদুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আলমগীর হোসেন। রাহাত ফার্মগেটের ‘উত্তরণ মোটরস’ এর কর্মচারী ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি বেলা আড়াইটার দিকে তাকে ওই দোকানের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২১ তারিখ তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ ওইদিন জিডি নেয়নি। পরের দিন ২২ জানুয়ারি তার মা সুফিয়া বেগম একটি জিডি করেন। জিডি নম্বর ১২৫১। এরপর ২৭ জানুয়ারি একই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন তিনি। তার আত্মীয়রা জানান, গণমাধ্যমে ক্রসফায়ারের খবর পাওয়ার পর মেডিক্যালের মর্গে তাদের খোঁজ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এরপর ঢামেক হাসপাতালের মর্গে তাকে পাওয়া যায়।

৩২. মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ
৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যাত্রাবাড়ীতে মাতুয়াইলের কাঠেরপুল এলাকায় র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ নিহত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত মুজাহিদের লাশ সনাক্ত করেন তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছোট ভাই মোহাম্মদ সোহাগ। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল খায়ের ভূঁইয়া। নিহত জাহিদের ভাই মোহাম্মদ সোহাগ জানান, তার ভাই রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করতেন।

৩৩. আল আমিন
৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ভাসানটেক থানাধীন শিল্পীরটেক এলাকার বালুর মাঠে গুলিবিদ্ধ আল আমিন নামে এক যুবকের (৩০) লাশ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা করা হচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব বা যৌথবাহিনী কর্তৃক অপহরণের পর তাকে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।

৩৪. জসিম উদ্দিন হাওলাদার
০৮ ফেব্রেুয়ারি রোববার রাতে রাজধানীর তালতলায় কথিত ক্রসফায়ারের শিকার হন ছাত্রশিবির নেতা জসিম উদ্দিন হাওলাদার (২৩)। তিনি ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পশ্চিম শাখার মিরপুর পূর্ব থানার সাংগঠনিক সম্পাদক। ০৮ ফেব্রেুয়ারি সকাল ৮টায় রাজধানীর শ্যামলীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ফেরার পথে লেগুনা থেকে নামিয়ে জসিম উদ্দিন হাওলাদারসহ ৪ জনকে আটক করে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের খবরটি সকল টিভি চ্যানেলসহ সব মিডিয়াতেই ফলাও করে প্রচার করা হয়। এর পর তাদেরকে থানা থেকে ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হলে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া হয়। কিন্তু রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে তাকে হত্যা করা হয়। তার পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার। তার গ্রামের বাড়ি কুন্দিয়ালপাড়া, সাহেবের হাট, বরিশাল। তিনি কাজীপাড়া সিদ্দীকিয়া ফাজিল মাদরাসার ফাজিল ফলপ্রার্থী ছিলেন।

৩৫. মনির হোসেন
রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মনির হোসেন (২৪)। তিনি মিরপুরের একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তাঁর বড় ভাই মোহাম্মদ ইস্রাফিল। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুরের পূর্ব মনিপুর এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মনির। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় মিরপুর থানা পুলিশ। ইস্রাফিল জানান, তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ হানিফ। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মনির ছোট। তাঁদের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার আস্কর পাটোয়ারী গ্রামে। মনির অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৫-২০ দিন আগে গ্রামের বাড়ি থেকে মনির ঢাকায় আসেন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

৩৬. রাসেল সরদার
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত রাসেল সরদারের স্ত্রী শেফালি বেগম জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল তার স্বামী। একাধিক থানায় খোঁজ করে স্বামীর সংবাদ পাননি তিনি। চারদিন পর সোমবার মর্গে গিয়ে স্বামীর লাশ দেখতে পান তিনি। পুলিশের দাবি সোমবার ভোর রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাসেল সরদার।

৩৭. সাহাব উদ্দীন পাটোয়ারী
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ পর্বের ছাত্র ও কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর শিবিরের সভাপতি শাহাব উদ্দীন পাটোয়ারীকে (২৩) সাদা পোশাকের পুলিশ ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইব্রাহীম অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার মাথায় গুলির চিহ্ন ছিল। চৌদ্দগ্রামের চান্দিস পাড়া গ্রামের মাওলানা মো: জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর পুত্র।

৩৮. শহিদুল ইসলাম
৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে যশোর জেলার শার্শা উপজেলা রামনগর পিকনিক কর্নার এলাকায় থেকে জামায়াতকর্মী শহিদুলকে (৩৬) আটক করে নিয়ে যায় যশোর পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় গুলিতে নিহত হন শহিদুল। নিহত শহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মৃত নুর আলীর ছেলে ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল খালেকের ভাগ্নে।

৩৯. শাহাবুদ্দীন
৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাখালিবাজারে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য গবেষণা সম্পাদক শাহাবুদ্দিন, বিনোদপুর আবাসিক মেস শাখার সভাপতি মফিজুর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ হাবিবুর রহমান হল সভাপতি হাবিবুর রহমান বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে মোটরসাইকেলে কাটাখালি পৌরসভার সামনে এলে মতিহার থানা পুলিশ তাদের আটক করে। রাত আড়াইটার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার শাহাবুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পিতার নাম মো. রফিকুল্লাহ।

৪০. ইফ্ফাকাতুত দোহা সাদিয়া
৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গোলাপবাগে (পশ্চিম যাত্রাবাড়ী) পিতাকে খুঁজতে এসে না পেয়ে ছাত্রলীগের একদল দুর্বৃত্ত সাদিয়া (১৯) ও তার মাকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে। সাদিয়াকে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সে মারা যায়। তার মা ফৌজিয়া বেগম মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সাদিয়া ইডেন কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের ১ম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

৪১. মতিয়ার রহমান
১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে যৌথবাহিনী ইউনিয়ন শিবিরের সভাপতি মতিয়ার রহমান মতিকে (২২) গ্রেফতার করে হাতে ও পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ মতিয়ারের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চিকিৎসার পরিবর্তে পুলিশ হেফাজতে আরো নির্যাতন করা হয়। পরে অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান। দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দর্শন ৩য় বর্ষের ছাত্র। তার পিতার নাম মোঃ আ: রহমান।

৪২. মোস্তফা মঞ্জিল
১৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জামায়াতকর্মী মোস্তফা মঞ্জিল (৩২) নিহত হন। সে গাইবান্ধা সদরের সাহাপাড়া ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের জসিজার মাস্টারের ছেলে। তিনি শিবিরের সাবেক থানা সেক্রেটারি ছিলেন।

৪৩. শফিকুল ইসলাম
১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসুদেবপুর স্কুলের একটি গাছের নিচ থেকে নাইটগার্ড শফিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তিনি জামায়াত সমর্থক এবং আবুল হোসেনের ছেলে। নিহত শফিকুলের স্ত্রী রশিদা বেগম জানান, আমার নিরপরাধ স্বামীকে বুট চাপা দিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পিতা- আবুল হোসেন।

৪৪. রূপক মিয়া
১৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় গোবিন্দগঞ্জের তালুক কানুপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর স্কুল এন্ড কলেজের একটি কক্ষ থেকে র‌্যাব রূপক মিয়া নামে এক জামায়াত কর্মীকে আটক করে। রূপকের পিতা সদর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, আমার পুত্র রূপককে বুড়িরভিটা থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সে নিখোঁজ রয়েছে।

৪৫. মাসুদ তারেক
১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর মুগদায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাসুদ তারেক (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। তারেকের বাবা আবু জাফর সিকদার সমকালকে বলেন, তার ছেলে ডিবি পুলিশের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। ওকে ধরার সময় বারবার ডিবি পুলিশের কাছে গ্রেফতারের কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তারা শুধু বলেছে, ইনফরমেশন আছে। এরপর চোখের সামনেই ছেলেটাকে বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে উল্টোভাবে হাতকড়া পরায়। মারতে মারতেই তাকে বাসা থেকে বের করা হয়। নিজের বা ছেলের কোনো ব্যক্তিগত শত্রু নেই জানিয়ে আবু জাফর বলেন, বুঝতে পারছি না ডিবি পুলিশ এমন করল কেন?

৪৬-৪৭. আবু সাঈদ ও বজলুর রহমান
১৮ ফেব্রুয়ারি যশোর মণিরামপুর উপজেলার বেগারিতলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মী আবু সাঈদ (৩৬) ও বজলুর রহমান (৩৮) নিহত হন। নিহতরা মণিরামপুরের জয়পুর গুপেরহাট এলাকার বাসিন্দা। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করে রাতে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

৪৮. বাচ্চু
৬ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ১১টায় আউরিয়া গ্রামের আ. জব্বারের ছেলে বাচ্চুকে জগৎপট্টি থেকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ারকে আটক করে। পুলিশ জানায়, গভীর রাতে ওসি মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাচ্চুকে নিয়ে নাশকতাকারীদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। স্বরূপকাঠি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে নাশকতার উদ্দেশে একত্রিত হওয়া ২০ দলীয় জোটের সমর্থকরা বাচ্চুকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে বাচ্চু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

৪৯. রাজু
৭ ফেব্রুয়ারি যশোরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজু ওরফে ভাইপো রাজু নিহত হন। রাজু যশোর শহরের গাড়িখানা রোড এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে। র‌্যাবের দাবি রাজুকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে শনিবার মধ্যরাতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লি রেলক্রসিং এলাকার ইশমাম পেট্রলপাম্পের কাছে গেলে তার সহযোগীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গুলি বিনিময়কালে নিজের সহযোগীদের গুলিতে নিহত হন রাজু।

৫০. মোহাম্মদ স্বপন
৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত সোয়া ১টায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে স্বপন মিয়া নিহত হন। সে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের কাইয়ুম মিয়ার ছেলে। সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল জানান, শনিবার সকালে কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে পুলিশের একটি টিম তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে উপজেলার ভাটপাড়ায় পৌঁছলে স্বপনের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্বপনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।

৫১. রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন
১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় সোহাগী বাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রফিকুল ইসলাম ওরফে খোকন (৪৫) নিহত হয়। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি জানান, খোকনকে ধরতে রাতে সোহাগীবাজারে অভিযানে গেলে গোলাগুলির এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ খোকনকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

৫২. মো. বাবুল হোসেন
১৯ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় যুবদল নেতা মো. বাবুল হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি সদর উপজেলার ভাঙ্গাগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। নেয়ামতপুর দোলাকান্দির একটি খাল থেকে তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।

৫৩. কবির মোল্লা
২০ ফেব্রুয়ারি আগৈলঝাড়া উপজেলার বুদার বাইপাস সড়কে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নগরবাড়ী এলাকার হোসেন মোল্লার পুত্র উপজেলা জাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির মোল্লা (৩৫) নিহত হয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে।

৫৪. টিপু হাওলাদার
২০ফেব্রুয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক নগরবাড়ি গ্রামের মৃত মতিউর রহমান হাওলাদারের ছেলে টিপু হাওলাদার (৩৫)। পরিবারের দাবি দুই দিন আগে গ্রেফতার করলেও আদালতে হাজির না করে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

পৃথিবীর কোনও মৃতদেহেরই কথা বলার ক্ষমতা নেই। কিন্তু একটি ছবি যেন কথা বলছে। শিয়াল বা কুকুর যেভাবে মৃতদেহ খুবলে খায়, নিহত শাহাবুদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওভাবে চামড়া মাংস হাড্ডি পর্যন্ত খামচে আঁচড়িয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। ট্রাকের নিচে চাপা পড়া মৃতদেহও এতটা ভাঙাচোরা হয়ে যায় না। অথচ শাহাবুদ্দিনের হাত পা বেঁকে অস্বাভাবিকভাবে সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে আছে। তার শরীরের হাড্ডিগুলো ভেঙে ফেলে ইচ্ছামতো মেরে ভেঙে শেষ পর্যন্ত মারা যাওয়ার পর চামড়ার আবরণে দলা মোচড়া করে তারা ফেলে গেছে হাসপাতালের মর্গে।

গত দুই মাসে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত প্রায় ৫০ জনেরও বেশি মেধাবী ছাত্র ও রাজনীতিবিদের হত্যাচিত্র প্রায় একই রকম। এ নৃশংসতা হার মানিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীবাহিনীর বীভৎসতাকেও।

কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয়, অপরাধ করলে তার নিয়মতান্ত্রিক বিচার হবে। কিন্তু বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের টার্গেট বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। অন্তত এই পরসিংখ্যান থেকে তাই প্রমাণিত হয়।

লেখক : সাদমান সাদী (মানবাধিকারকর্মী)

No comments

Thank You For your Comments.

Powered by Blogger.
(function(i,s,o,g,r,a,m){i['GoogleAnalyticsObject']=r;i[r]=i[r]||function(){ (i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o), m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m) })(window,document,'script','https://www.google-analytics.com/analytics.js','ga'); ga('create', 'UA-127411154-1', 'auto'); ga('require', 'GTM-WSRD5Q2'); ga('send', 'pageview'); (function(i,s,o,g,r,a,m){i['GoogleAnalyticsObject']=r;i[r]=i[r]||function(){ (i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o), m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m) })(window,document,'script','https://www.google-analytics.com/analytics.js','ga'); ga('create', 'UA-127411154-1', 'auto'); ga('require', 'GTM-WSRD5Q2'); ga('send', 'pageview');