দাওয়াত ইলাল্লাহ- মতিউর রহমান নিযামী।
দাওয়াত ইলাল্লাহ
মানুষের জীবনে ও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আল্লাহর নির্দেশে নবী রাসূলদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত সব নবীর আন্দোলনের সূচনা হয়েছে দাওয়াতের মাধ্যমে। আল কোরআন বিভিন্ন নবীর আন্দোলন প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছে:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ [الأعراف
আমি নূহ (আঃ) কে তার কওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর- আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ বা প্রভু নেই। (আল আ’রাফ:৫৯)
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ [الأعراف
এবং আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আমার দেশবাসী ! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ: ৬৫)
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ [الأعراف
এবং সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর দেশবাসীকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওমের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর দসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ:৭৩)
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ [الأعراف
এবং মাদইয়ানবাসীর প্রতি তাদেরই ভাই শোয়ায়েব আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম। তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। (আল আ’রাফ:৮৫)
শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর আন্দোলনে ও তাঁকে প্রথম এভাবে মানব জাতিকে আল্লাহর দাসত্ব কবুলের আহবান জানাতে হয়। তাঁর জীবনের প্রথম গণভাষণের প্রধান বক্তব্য ছিল:
يايها الناس قولوا لا اله الا تفلحون
হে মানব জাতি! তোমরা ঘোষণা কর আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই তাহলে তোমরা সফল হবে। (আল হাদিস) আল্লাহর দাসত্ব কবুল এবং গায়রুল্লাহর দাসত্ব বর্জনের আহবান জানানোর এই কাজটা আল কোরআনে বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করা হয়। কোথাও সরাসরি নির্দেশ আকারে এসেছে, যেমন সূরা নাহলের শেষ দুটি আয়াতে দাওয়াতের পদ্ধতি শেখাতে গিয়ে বলা হয়েছ:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ [النحل : 125]
ডাক, তোমার রবের পথের দিকে হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। (আন নাহল:১২৫)কোথাও এসেছে রাসূলের কাজ ও পথের পরিচয় প্রদান হিসেবে। যেমন সূরায়ে ইউসুফের শেষ রুকুতে বলা হয়েছে:
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ [يوسف : 108]
বলে দিন হে মুহাম্মদ (সা.) এটাই একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই। (ইউসুফ: ১০৮)
সূরায়ে আহযাবে ৪৫-৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا [الأحزاب : 45 ، 46]
হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে এবং খোদার নির্দেশে তাঁর প্রতি আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। আবার কোথাও এসেছে এই কাজের প্রশংসা বর্ণনা হিসেবে। যেমন, সূরায়ে হা মীম আসসাজদায় ৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ [فصلت : 33]
আর সে ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কারও হতে পারে কি যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং ঘোষণা করে যে, আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। কোথাও এসেছে উম্মতে মুহাম্মদীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে। যেমন, সূরায়ে আল ইমরানের ১০৪ আয়াতে বলা হয়েছে:
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ [آل عمران : 104]
তোমাদেও মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই থাকতে হবে যারা ভাল কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেবে। সমস্ত আম্বিায়অয়ে কেরামের দাওয়াতের মূল সুর, মূল আবেদন এব ও অভিন্ন। সবার দাওয়াতের মধ্যেই আমরা কয়েকটি প্রধান দিক লক্ষ্য করতে পারি। প্রথমতঃ সবাই তাওহীদেও আল্লাহর সার্বভৌমত্বেও দাওয়াত দিয়েছেন এবং গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরিহার করার আহ্বান রেখেছেন।
দ্বিতীয়তঃতাঁরা সমাজের খুঁটিনাটি সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা না থাকার ফলে যে সব বড় বড় সমস্যায় মানুষ জর্জরিত ছির সেগুলোর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। তৃতীয়তঃ দাওয়াত কবুল না করার পরিণাম ও পরিণতি দুনিয়া ও আখেরাতে কি হবে এই সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে, ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এই দাওয়াত কবুলের প্রতিদান-প্রতিফল দুনিয়া ও আখেরাতে কি হবে সে সম্পর্কেও শুভ সংবাদ শুনানো হয়েছে। আম্বিয়ায়ে কেরামের এই দাওয়াতের মেজাজ প্রকৃতি গভীরভাবে অনুধাবনের ও অনুশীলনের চেষ্টা করলে যে কেউ বুভে ত সক্ষম হবে, এই দাওয়াত ছিলণ যার যার সময়ের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের একটা আপোষহীন বিপ্লবী ঘোষনা। এই জন্যেই প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থার পষ্ঠপোষক, ধারক, বাহক ও সুবিধাভেগীদেও সাথে তাদেও সংঘাত ছিল অনিবার্য।
No comments
Thank You For your Comments.