ইসলামী নেতৃত্ব
মুহাম্মদ
কামারুজ্জামান
ইতিহাসের সব
যুগেই এক শ্রেনীর লোকের সন্ধান পাওয়া যায় যারা দেশ, সমাজ জাতিকে পরিচালনা করে। সমাজের দায়িত্ব পালন করেন। এদেরকেই বলা হয়
নেতা।
নেতৃত্ব এমন
একটি প্রক্রিয়া বা একটি দল, গ্রুপ বা মানব
গোষ্ঠীকে পরিকল্পিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত করে। মানব
জাতির ইতিহাসের উত্থান-পতনের এবং ঘটনা প্রবাহে মানব সমাজের উন্নয়ন অগ্রগতিতে তারা
সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মানব গোষ্ঠীকে প্রভাবিত ও সংবদ্ধ ক রে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন
এই ব্যক্তিগন লক্ষ্য হাসিলে ভূমিকা পালন করেন। সত্যিকারের মানব কল্যানের জন্যই
নেতৃত্ব মানব গোষ্ঠীকে সক্রিয় ও সচেতন করে তুলেন।
“ওয়া রাফায়ানা বায়দাহুম ফাওকা বায়দেন দারাজাতেন লেইয়বাত্তা খিজা
বায়দুহাম বারদান সুখরিয়া ওয়ারাহমাতু রাব্বেকা খাইরুম মেম্মা ইয়াজমাউন (যুখরুখ
৪৩ঃ৩২)৫
“আর তাদের মধ্যে কিছু লোককে অপর কিছু লোকের উপর আমিই প্রাধান্য দিয়েছি
যেন তারা পরস্পরের থেকে কাজ নিতে পারে। আর তোমার খোদার রহমত সেই ধনসম্পদ থেকে অধিক
মূল্যবান যা (ধনবানরা) দুই হাতে সংগ্রহ করছে।”
আল্লাহ
তায়ালা মানুষের মধ্যে যাদের প্রাধান্য দিয়েছেন বা বিশেষ মর্যাদা ও দায়িত্ব দিয়ে
থাকেন তারা অন্যদের নিকট থেকে কাজ আদায় করে অন্যদের পরিচালনা করে থাকেন। নেতৃত্ব
ছাড়া সমাজ চলে না। আদিকাল থেকেই আল্লাহ তায়ালা এ ব্যবস্থা
করে দিয়েছেন।
ইন্না
আকরামাকুম ইনদাল্লাহি আতকাকুম। ইননাললাহা আলিমুল খাবির (হুজরাত : ৪৯ঃ১৩)
“বস্তুত আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সে যে তোমাদের
মধ্যে সবচেয়ে নীতিপরায়ন/ মুত্তাকী নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব বিষয়ে জানেন এবং সব বিষয়ে
অবহিত।”
ইসলামে
মানুষের সম্মান ও মর্যাদার ভিত্তি হচ্ছে তার নীতিপরায়নতা ও চরিত্র। এগুনেই একজন
অন্যের চাইতে শ্রেষ্ঠ বা সম্মানিতহতে পারে।
ইসলামের
নেতৃত্ব হবে জন প্রতিনিধিমূলক
জনগনের
সমর্থন বা রায় নিয়ে নেতা নির্বাচিত হবেন। অথবা তার নেতা হবার পিছনে জনগনের অনুমোদন
থাকবে। আম্বিয়া কেরামকে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নেতার মর্যাদা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
কিš‧
নবুওতের দরজা বন্ধ হবার পর নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব মুসলিম
উম্মাহ বা জনগনের উপর। স্বঘোষিত নেতা হবার সুযোগ ইসলামে নেই। নেতৃত্বের লোভ করা বা
দাবী করাটা ইসলামের দৃষ্টিতে নেতা হবার একটা বড় অযোগ্যতা। যে, কোন পদ চায় বা তার জন্য আকাঙ্খা করে নবী (সঃ) তাকে সে পদে নিয়োগ করতেন
না। (বুখারী)
ইসলামের
স্বর্ণযুগের খলিফাগন মনোনীত বা নির্বাচিত হবার পর জনগনের নিকট নিজেদের পেশ করেছেন
এবং জনগনের অনুমোদন নিয়েছেন, বায়আত
গ্রহণ করেছেন। তিনি জনগনের সামনে হাজির হয়ে তার ঐতিহাসিক ভাষনে বলেছিলেন, আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। তথাপি আমাকে এ শাসন কার্যের
দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ---- আমি সত্যিকার ভাবেই পছন্দ করি যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে মুক্তি দিয়ে এ দায়িত্ব পালন কর।
ইসলামে
নেতা হচ্ছেন খাদিম
“সাইয়্যেদুল কওমে খাদমুহুম”
জাতির
নেতাগন হচ্ছেন তাদের খাদেম/ সেবক / জনগনের উপর কতৃত্ব করার জন্য নয় বরং জনগন ও
সমাজের সেবা করে তাদের সুখে দুঃখে পাশে থেকে তাদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন
করে। তাদের আস্থা অর্জন করেই একজন নেতা দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যারা জনগনের
দ্বারে গিয়ে তাদের হৃদয় জয় করতে পারবে জনগন তাদেরকেই হৃদয় দিয়ে গ্রহন করবে এবং
তাদের ডাকে চুড়ান্ত ত্যাগ ও কোরবানী স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে।
শূরা
পদ্ধতিঃ
ইসলামী
নেতৃত্বের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
শূরা হচ্ছে
ইসলামী নেতৃত্বের মে․লিক প্রতিষ্ঠান। কোরআন মুসলিম নেতাদের জন্য পরামর্শ গ্রহন কে
বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ---------------------- (আশশূরা- ৪২ঃ৩৮)
“যারা নিজেদের খোদার হুকুম মানে নামাজ কায়েম করে, নিজেদের যাবতীয় ব্যাপারে নিজেদের পারস্পারিক পরামর্শের ভিত্তিতে
সম্পন্ন করে আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে আল্লাহ রব্বুল আলামীন
মহানবী (সঃ) কে পর্যন্ত তার সঙ্গী সাথীদের সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ দান করেছেন।
“দ্বীন ইসলামের কাজ কর্মে তাদের পরামর্শ গ্রহণ কর” (আল ইমরান ৩ঃ১৫৯)।
মজলিশে
শূরার মাধ্যমে সদস্যগন সিদ্ধান্ত গ্রহনে এবং নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনের
সুযোগ পান। তাদের মেধা ও বিচারবুদ্ধিঅনুযায়ী আন্দোলনে তারা অবদান রাখতে সক্ষম হন।
ইসলামী নেতৃত্বের সকল বিষয়ে শূরার পরামর্শ গ্রহন অপ্রয়োজনীয়। গুরুত্বপূর্ন নীতি
নির্ধারন প্রশ্নেই পরামর্শ করা জরুরী। শূরার আওতা নিম্নরূপ হতে পারে-
- প্রশাসনিক ও নির্বাহী বিষয়গুলোর
দায়িত্ব নেতার উপর ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।
- কোন জরুরী পরিস্থিতিতে দ্রুত
সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে নেতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন কিন্তু পরবর্তী শূরার বৈঠকে তা অবশ্য
পর্যালোচনার জন্য পেশ করতে হবে।
- শূরার সদস্যগন যাতে স্বাধীনভাবে
তাদের মতামত পেশ করতে পারেন, নেতার সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম সম্পর্কে নিঃসংকোচে জিজ্ঞাসাবাদ
করতে পারেন তার নিশ্চয়তা শূরায় থাকতে হবে।
- গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সমূহ, নীতিমালা, কর্মকে․শল দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য নির্ধারনের বিষয় সমূহে মজলিশে
শূরার নির্বাচিত প্রতিনিধি বা আহলে বায়দের পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়া
উচিত। এসব বিষয়ে কোন নেতাকে একা সিদ্ধান্ত দিতে দেওয়া উচিত না এবং নেতার একা
এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্ব নেয়া ঠিক নয়। এসম্পর্কে বির্তক রয়েছে যে
নেতা ইমাম বা আমীর শূরাকে শুধু অবহিত করলেই চলবে না শূরার পরামর্শ গ্রহণ তার
জন্য বাধ্যতামূলক। এ সম্পর্কে ইজতিহাদের সুযোগ রয়েছে। তাই কোন ফতুয়া দিয়ে
এটার সমাধান করা যাবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্য শূরার
বাধ্যবাধকতাই প্রয়োজন। আমাদের জন্য প্রয়োজন একটি সুশৃঙ্খল মজবুত
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর শক্তিশালী শূরা। সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় শূরা
সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সক্রিয় অংশগ্রহন একান্ত জরুরী। আন্দোলনকে গতিশীল ও
জবিন্ত আন্দোলনে পরিণত করার জন্যে কুরানিক শূরা পদ্ধতির সর্বোত্তম ব্যবহার
আমাদের নিশ্চিত করা উচিত।
নেতৃত্ব
আল্লাহর দানঃ
আল্লাহ
তায়ালা অনেক মানুষকে নেতৃত্বের অসাধারন গুনাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেন। সব মানুষকে একই
ধরনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেন না। নেতৃত্ব বিকাশ লাভের পারিপাশ্বিক পরিবেশের উপর
নেতৃত্ব গড়ে উঠা নির্ভর করে। পরিস্তিতিগত কারনেও নেতৃত্বের আর্বিভাব ঘটতে পারে। তবে আল্লাহ প্রদত্ত গুনাবলীর সমাবেশ যাদের
মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তাদেরকে সামনে এগিয়ে দেয়া উচিত। তারা যদি অনুশীলনকারী বা
ইসলাম চর্চাকারী মুসলমান হন তাহলে আন্দোলনের বা সমাজের খেদমত করার সুযোগ তাদের
জন্য সৃষ্টি করে দেওয়া অপরিহার্য কর্তব্য। তাদের কে তাদের যোগ্যতানুযায়ী দায়িত্বে
নির্বাচিত বা নিয়োাজত করা উচিত যাতে তাদের বিশেষ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ইসলামের জন্যে
সম্পদে পরিণত হয়। বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের মধ্যে নেতৃত্বের গুনাবলীর বিকাশ
ঘটানো উচিত সমাজ ও জাতির কল্যানের প্রয়োজনেই। ইসলাম অনুশীলন করেননা এমন লোকদের
মধ্যে নেতৃত্বের সম্ভাবনাময় গুনাবলী দেখতে পেলে আমাদের উচিত তাদের সাথে সংলাপ ও
যোগাযোগের মাধ্যমে এগিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া। আর যদি অমুসলিম কারো মধ্যে নেতৃত্বের
অসাধারন গুনাবলী লক্ষ্য করা যায় তাহলে তার সামনে ইসলামের সে․ন্দর্য
ও দাওয়াত তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। মহানবী সঃ বলেন মানব সমাজ হচ্ছে খনির মত।
জাহেলিয়াতের যুগে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম যারা ইসলামেও তারা হবেন সর্বোত্তম যদি
তারা সত্যিকারভাবে ইসলামকে গ্রহণ করেন।
ইনসাফ
ও ইসলামী নেতৃত্বঃ
নেতা কোন
অবস্থায় তার অধীন্যস্ত লোকদের মধ্যে বৈষম্য করবেন না। সবার সাথে ইনসাফ ভিত্তিক
আচরন করবেন। ধর্ম বর্ন গোত্র জাতীয়তা বা অঞ্চল নির্বিশেষে সকলেই নেতার কাছ থেকে
ইনসাফ পাবেন। এমনকি শত্রুর প্রতি ইনসাফের আচরন করতে নির্দেশ করে ইসলাম। “মুসলমানগন, আল্লাহ তোমাদিগকে এই আদেশ দিচ্ছেন
যে, যাবতীয় আমানত উহার উপযোগী লোকদের নিকট সোপর্দ করে
দাও। আর লোকদের মধ্যে যখন (কোন বিষয়ে) ফায়সালা করবে তখন ইনসাফের সাথে করবে।”-নিসা : ৫৮
“হে ঈমানদার লোকজন! খোদার ওয়াস্তে সত্য নীতির উপর স্থায়ীভাবে দন্ডায়মান
ও ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হও। কোন বিশেষ দলের
শত্রুতা
তোমাদেরকে যেন এতদূর উত্তেজিত না করে দেয় যে (তার ফলে) ইনসাফ ত্যাগ করে ফেলবে।
ন্যায় বিচার কর। বস্তুত খোদা পরস্তির সাথে এর গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। খোদাকে ভয় করে
কাজ করতে থাক তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত।”-
মায়েদা : ০৮
ইসলামী
আন্দোলনের নেতাকে সংগঠনের অভ্যন্তরেও ইনসাফ কায়েম করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে
তিনি একটি অভ্যন্তরীন কমিটি গঠন করতে পারেন এবং কমিটি অভ্যন্তরীন যাবতীয় দ্বন্দ,
অসন্তোষ দূর করবে।
গঠনমূলক
সমালোচনা, বাক-স্বাধীনতা,
জবাবদিহিতাঃ
ইসলামী
নেতৃত্ব গঠনমূলক সমালোচনা আহবান করবেন। নিঃসংকোচে লোকদের কথা বলা ও মতামত পেশ করার
সুযোগ দিবেন। লোকদের প্রশ্নের জবাব দিবেন। নেতা দলে বা সংগঠনে মুক্ত চিন্তা সুস্থ্য মত বিনিময়,
সমালোচনা পারস্পারিক উপদেশ ও পরামর্শের এমন একটি সুন্দর পরিবেশ
সৃষ্টি করবেন যাতে সবাই খোলাখুলি আলাপ আলোচনায় অংশ নিতে স্বস্তি অনুভব করবেন। এই
প্রক্রিয়ায় নেতার ভুল হবার আশংকা খুব কম থেকে যাবে। কারন সবাই নেতার তত্ত্বাবধানের
সুযোগ পাবেন। ইসলামী নেতকে জনগনের নিকট জবাবদিহী করতে হবে। এ ধরনের সহযোগিতামূলক
অংশীদারী নেতৃত্ব আন্দোলনের মধ্যে চিন্তার ঐক্য এবং নিজেদের গুনাবলীর বিকাশে খুবই
সহায়ক হয়ে থাকে।
নেতৃত্বের
দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞাঃ
মজবুত ও
কার্যকর নেতৃত্ব দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞার সাথে ভবিষ্যত কার্যক্রম ও লক্ষ্য নির্ধারন
করে। সে লক্ষ্যে পৌছার জন্য যুক্তিসংগত কর্মকে․শল
নির্মান করে। শক্তিকেন্দ্র সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় টিম
ওয়ার্ক সৃষ্টি করে। যাদের মাধ্যমে কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে তাদেরকে সর্বোচ্চ উদ্বুদ্ভ ও অনুপ্রানিত করার জন্য নেতৃত্ব ব্যবস্থা গ্রহন করে। মানব সমাজে নেতৃত্বের বিষয়টি আসলেই খুব জটিল। কারও মধ্যে নেতৃত্বের
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও অনুশীলন সাধনার অভাবে তা কার্যকর নেতৃত্বের রূপ নাও
নিতে পারে। নেতৃত্বের বিকাশ চর্চা, পরিবেশ, সুযোগ সুবিধা ও নানা সীমাবদ্ধতার
দ্বারা প্রবাবিত হতে পারে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা বাস্তব দৃষ্টান্ত সৃষ্টির
মাধ্যমে তার অনুসারীদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেন। একজন ভাল অনুসারীই একজন ভাল নেতা
হতে পারেন। অবশ্য একজন ভাল অনুসারী কোন অবস্থায়ই তার নেতার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না। তবে আন্তরিকাত
ও গঠনমূলক ভাবে নেতার ধারনা, মূল্যবোধ
আচরনের মোকাবেল করবেন প্রয়োজনে। নেতা ও অনুসারী একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। নেতাকে সর্বাবস্তার অনুসারীদের মঙ্গল নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে।
ইসলামী
নেতৃত্বের ‣বশিষ্ট্যঃ
আল্লার
প্রতি আনুত্যশীলতা ও রাসূল (সঃ) এর অনুসৃতি ইসলামী নেতা ও পরিচালিত সকলের জন্যে
একান্ত জরুরী। ইসলামী নেতৃত্ব দলবাদ, সংকীর্নতা ও আঞ্চলিকতার অনেক উর্ধ্বে থাকবেন। ব্যাপকতর ইসলামী লক্ষ্য
বাস্তবায়নে এবং আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে ইসলামের স্বর্থ সংরক্ষণে ইসলামী নেতৃত্বের
কড়া নজর থাকবে। ইসলামী নেতৃত্ব শরীয়তের বিধিবিধান কড়াকড়িভাবে মেনে চলবেন। দুশমন ও
প্রতিপক্ষের সাথে ব্যবহারেও তিনি শরীয়তের বাইরে যেতে পারবেন না।
অর্পিতদায়িত্ব
আল্লার পক্ষ থেকেঃ
ইসলাম একজন
নেতাকে যে অধিকার ও কতৃত্বদান করে তা মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ মহান ঐশি
বানীর মাধ্যমে এ দায়িত্ব ও অধিকার অর্পন করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “এরা সেই লোক যাদের দুনিয়ায় নেতৃত্ব ও ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম
করবে, যাকাত চালু করবে, নেকীর
হুকুম দেব এবং মন্দের নিষেধ করবে। সব ব্যাপারে চুড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে।”
(সূরা হজ্ব ২২ঃ৪১)
ইসলামী
নেতৃত্ব খেলাফতী বা গনতান্ত্রিকঃ
নেতৃত্বের
বিভিন্ন ধরন হতে পারে। এক নায়ক সূলভ বা ক্সস্বরাচার নেতৃত্ব তার দলের লোকদের উপর আস্থা রাখে না। তার বিশ্বাস
কেবলমাত্র বন্তুগত স্বার্থই মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি আদেশ জারি করেন তা
বাস্তবায়নের জন্যে এবং কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা বরদাশত করেন না। জনকল্যানমুখী বা হিতৈষী স্বৈরাচার বলেও এক ধরনের নেতৃত্ব লক্ষ্য করা যায়। এরা অনুসারীদের নিকট থেকে বেশ
মনযোগের সাথেই তাদের বক্তব্য শোনে এবং গনতান্ত্রিক হবার ভান করেন কিন্তু সর্বদা সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন নিজের মর্জি মত। গনতান্ত্রিক
নেতৃত্বের ধরন হলো দলের লোকদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহনে অংশ নেবার সুযোগ দান করেন। কখনও
সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রয়োজন ও যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না বস্তুনিষ্ঠ
সমালোচনা ও প্রশংসা করেন। আরেক ধরনের উদার ক্সনতিক নেতা দেখা যায় এদের নেতৃত্বের
উপর নিজেরই আস্থা খুব কম। দলের বা গ্রুপের জন্য কোন লক্ষ্য নির্ধারন করেন না। যোগাযোগ ও পারস্পারিক
সংলাপ যত কমে পারেন। এ ধরনের নেতারা তার সঙ্গীদের বলেন আপনারা মতামত দিন আমিও
আপনাদের মতই একজন মানুষ। আপনারাই বলেন কি করতে হবে। আপনারা যা সিদ্ধান্ত করবেন আমি
তাই নিয়ে এগিয়ে যাব। উপরে যে ধরনের নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে
গনতান্ত্রিক নেতৃত্বই কার্যকর এবং ইসলামের শরীয়ত ও খেলাফতি ব্যবস্থার সাথে সংগতিপূর্ন।
গনতান্ত্রিক নেতৃত্ব গতিশীল। এই নেতৃত্ব ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন এবং দলের মধ্যে
দায়িত্বশীলতা ও দায়িত্ব সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
ইসলামী
নেতৃত্বের মডেলঃ
যুগে যুগে
আম্বিয়া কেরামের যে দলটি দুনিয়ায় এসেছেন এবং মানব জাতিকে হেদায়াত ও মুক্তির পথ
প্রদর্শন করেছেন তারাই হচ্ছেন মানব জাতির সামনে নেতৃত্বের নমুনা। পৃথিবীর অন্যান্য
খ্যাতিমান যশস্বী ব্যক্তিদের সাথে নবী রাসূল (সঃ) এর দলের পার্থক্য হচ্ছে যে
শেষোক্ত দলটি প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত এবং আল্লহ কতৃক নিয়োজিত। মানব জাতির সত্যিকারের
কল্যানের পথ তারাই নির্মান করে গেছেন। শেষ নবী খাতামুন নাবিয়্যিন হযরত মুহাম্মদ
(সঃ) হচ্ছেন মানব জাতির সামনে সর্বশেষ মডেল। মহা বিপ্লবের মহা নায়ক হিসেবে
নেতৃত্বের এক অসাধারন নজীর তিনি স্থাপন করে গিয়েছেন। বিশ্ব ইতিহাসকে তিনি যতটা প্রভাবিত করে গেছেন আর কারও পক্ষে তা সম্ভব
হয়নি। বিশ্ব সভ্যতায় তার যে অবদান অন্যদের তার সাথে তুলনাও চলে না। বিপর্যয় ও
পতনের গভীরতম তলদেশ একটি মানব গোষ্ঠীকে কিনি কিভাবে বিশ্বের বুকে সুসভ্য সুদক্ষ
মর্যদাবান জাতিতে পরিণত করেছিলেন তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রতি নামাযে আমরা
মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সঃ) এর শানে যে দুরূদ পাঠ করি তার তাৎপর্যও আজকের মুসলিম
সমাজ যেন ভূলে গিয়েছে। দুরূদে আমরা ঘোষনা করি মুহাম্মদ (সঃ) আমাদের নেতা। তিনি
আমাদের অনুসরনীয় আদর্শ (ওসয়াতুন হাসানা)। জ্ঞান ছাড়াও আল্লাহ তায়ালা তাকে দান
করেছিলেন হিকমাহ। রসূল (সঃ) এই হিকমার প্রয়োগ করে বাস্তব জগৎবাসীকে আলো দান করে
গিয়েছেন। নমুনা স্থাপন করে গিয়েছেন। তার নমুনাই আমাদের চলার পাথেয়।
নেতৃত্বের
অভ্যাসগত ‣বশিষ্ট্যঃ
- ১। সময় কিভাবে ব্যায় হচ্ছে।
প্রতিটি সেকেন্ড যারা কাজে লাগাতে পারেন দুনিয়ায় তারাই বড় কাজ করতে পারেন।
সময়কে নিয়ন্ত্রন করতে হবে সময় যেন নেতাকে নিয়ন্ত্রন না করে।
- ২। ফলাফলের উপর গুরুত্ব প্রদান।
কাজের উপর নয় বরং নেট ফলাফলের উপর মনোনিবেশ করা উচিত। লক্ষ্য অর্জনে কতটা
অগ্রগতি হলো সে দিকে দেখা দরকার। কাজ কতটা হয়েছে সেটা খুব বড় ব্যাপার নয়
- ৩। দুর্বলতা দূর করার দিকে নজর
দিতে হবে। শুধূ নিজের নয় আন্দোলনের সকল ভাইবোনের। নিজের শক্তি ও দুর্বরতার
স্বীকৃতি দেয়া তা গ্রহন করে নিয়ে অন্যের মধ্যে যা কিছু ভাল আছে তা গ্রহন করতে
সক্ষম হওয়া উচিত।
- ৪। কতিপয় প্রধান ব্যাপারে পরিশ্রম
ও সাধনা কেন্দ্রীভূত করা উচিত যা ভাল ফল দিবে। এটাও করা উচিত অগ্রাধিার
বিবেচনা করে।
- ৫। আল্লার উপর নির্ভরশীলতা।
নিজেকে সীমাবদ্ধ করার চাইতে উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করা। কেননা যে মহান প্রভূর কাজ
আমরা করছি তিনি অনেক বিশাল ও শক্তিধর। কাজেই কারও ভয় বা পরোয়া করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
নেতৃত্বের
গুনাবলীঃ
১.
বৃদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক শক্তি। বিস্ময়কর পান্ডিত্যের প্রয়োজন নেই। তবে মানষিক দিক
থেকে শক্তিশালী এবং বৃদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে অগ্রসর হতে হবে। নবী করীম (সঃ) বলেছেন
“লোকদের নেতা (ইমাম) হবেন সেই ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে বড় আলিম।
এদিক দিয়ে সমান হলে সেই ব্যক্তিই অগ্রসর হবেন যিনি সুন্নত সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ।
এতে সমান মানের হলে সেই ব্যক্তিই নামায পড়াবেন যিনি হিজরতের ব্যাপারে অগ্রবর্তী।
এতেও সমান হলে ইমাম হবেন সেই ব্যক্তি যিনি বয়সে বড়। কোন ব্যক্তি যেন অপর ভায়ের
প্রভাব প্রতিপত্তির স্থানে ইমামতি না করে এবং তার ঘরে তার গদির উপর তার অনুমতি ব্যতীত যেন কেহ না বসে।”
মুসনাদে আহমদ এ হাদীসে ইমামের৮ গুনাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে।
যেহেতু ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা নয় তাই রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের জন্য
নেতা নির্বাচনের সময়ও সেসব গুনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২. ভালো
মানুষ হওয়া ভাল মানুষ হিসাবে সম্মান অর্জন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সম্মানিত
করেছেন। তার আন্তরিকতা ও ইখলাস হবে প্রশ্নাতীত। শত্রু মিত্র সকলেই মানুষ হিসেবে
তিনি যে খুবই ভাল তা এক বাক্যে স্বীকার করবে।
৩. উদ্যোগ ও
উদ্ভাবনী শক্তি চিন্তাভাবনা করা এবং কোন কিছুর উদ্যোগ গ্রহন বা উদ্ভাবনের যোগ্যতা
থাকতে হবে।
৪.
যোগাযোগের দক্ষতা আমাদের প্রিয় নবীজিকে আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে গন্য
করা হত। ইসলামের ইতিহাসের সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিই বক্তৃতা ভাষনে দক্ষতা সম্পন্ন ছিলেন। তাদের
বাচনভঙ্গি ভাষা জ্ঞান পরিবেশনের ধরন ও ষ্টাইল মানব মন্ডলীকে তীব্রভাবে আকর্ষন করত।
পৃথিবীর বড় বড় বিপ্লব আন্দোলনের নেতৃত্ব যারাই দিয়েছেন তারা নিজেদের ভাবপ্রকাশ ও
বক্তব্য পরিবেশনের চমৎকার আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্যের জোরে মানুষদেরকে আলোড়িত করতে
সক্ষম ছিলেন। শুধু বক্তব্য ভাষনই নয় তাদের কলম ও লিখনিও তাদের যোগাযোগ দক্ষতার
স্বাক্ষর।
৫। বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা সমকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সংঘাতময় বিশ্বের ঘটনাবলী
সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। নিয়মিত সংবাদপত্র ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাথে সংযোগ
থাকতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে নবী করীম (সঃ) এর সাহাবাগন কতটা সটেতন ছিলেন তার প্রমান বহন করে তৎকালীন
একটি যুদ্ধের আশংকা এবং সে যুদ্ধে রোমানদের বিজয় সম্পর্কে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর
বাজি ধরার ঘটনা থেকে। তাঁর বিশ্লেষন ও ধারনা সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে কতটা চিন্তা ভাবনা করলে বা খোঁজ খবর রাখলে ঐ বাজি ধরার ঘটনা ঘটতে পারে তা
ভেবে দেখলেই অনুধাবন করা যাবে। আধুনিক যুগে নেতৃত্বের জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থাকা জরুরী।
৬। মানুষের
প্রতি ভালবাসা হযরত আওফ ইবনে মালিক রাসূলে করীম (সঃ) থেকে বর্ননা করেছেন,
তিনি ইরশাদ করেছেন তোমাদের উত্তম নেতা হচ্ছেন তারা তাদের কে
তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমদের ভালবাসে, তারা নিজেদের
জন্য দোয়া করে, তোমরাও তাদের জন্য দোয়া কর আর তোমদের
নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারা যাদের তোমরা ঘৃনা কর এবং যারা তোমদের ঘৃনা করে, তোমরা যাদের উপরে অভিশাপ বর্ষণ কর। সাহাবাদের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো
হে রাসূল (সঃ)! আমরা কি তরবারীর সাহায্যে তাদের মোকাবেলা করব? তিনি বললেন, না যতক্ষন না তারা তোমাদের মধ্যে
নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করতে থাকবে। তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে যদি তোমরা এমন কোন জিনিস দেখতে পাও যা তোমরা অপছন্দ কর,
তবে তোমরা তার কাজ ঘৃনা করতে থাক। কিন্তু তার আনুগত্য থেকে হাত টেনে নিও না। (মুসলিম) এই হাদীস থেকে ভাল
নেতা ও খারাপ নেতার পরিচয় পাওয়া যায়। জনগন যাদের ভালবাসে ও কল্যান কামনা করে তারাই
ভাল নেতা হিসাবে গন্য হন। মোহাম্মদ না থাকলে অন্তর থেকেও দোয়া আসে না।
৭। দৃঢ়
সংকল্প ও সাহসিকতা দুর্বল চিত্ত ও ভীরু লোকের পক্ষে নেত্ত্ব দান সমভব নয়। ভীরু কা
পুরুষদের পিছনে জনগন সংঘবদ্ধ হয়না কখনো। সাহসী লোকরাই পৃথিবীতে ইতিহাস সৃষ্টি
করেছে। অন্যরা তাদের অনুসরণ করেছে মাত্র।
৮। দায়িত্বশীলতাঃ
ইসলামী
নেতৃত্ব দায়িত্ব চেয়ে নেন না। কিন্তু তার উপর দায়িত্ব
আসলে তিনি সর্বোত্তমভাবে তা পালনের চেষ্টা করেন। মাকাল বিন ইয়াসার থেকে বর্নিত
তিনি বলেছেন যে, আমি রসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন বিষয় ও ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়ে বসল কিন্তু অতঃপর সে তাদের কল্যান কামনা ও খেদমতের জন্য এ রকম চেষ্টাও করল
না যা সে নিজের জন্য করে থাকে, তবে আল্লাহ তাকে উপুড় করে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (আল তাবারানী) আল্লাহর রসূল (সঃ) বলেন, আমার উম্মতের লোকদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজের যে যিম্মাদার হবে,
সে যদি লোকদের ভয়ানক অশান্তি ও দুঃখ কষ্টে নিক্ষেপ করে ততে হে
আল্লাহ ! তুমিও তার জীবনকে সংকীর্ন ও কষ্টপূর্ন করে দাও। আর যে ব্যক্তি আমার
উম্মতের সামগ্রিক ব্যাপার ও কাজকর্মের দায়িত্বশীল হবে এবং অতঃপর সে যদি জনগনের
প্রতি ভালবাসা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করে তবে হে আল্লাহ তুমি তার প্রতিও অনুগ্রহ দান
কর। (মুসলিম)
উল্লেখিত
হাদীস দুটি থেকে পরিস্কার যে,যাদের উপর
নেতৃত্বের দায়িত্ব আসবে তাদেরকে মানুষের প্রতি দরদী হতে হবে। জনগনের প্রতি ভলবাসা,
তাদের কল্যান কামনা, জনগনের প্রতি
সহানুভূতি যাদের নেই এবং যারা মানুষের উপর দুঃখ কষ্ট ও বিপর্যয় চাপিয়ে দেয়
মুসলমানদের নেতা হবার অধিকার তাদের নেই। এক মুর্হর্তের তরেও মুসলিম সমাজের নেতা
থাকতে পারে না তারা। আর নেতা যদি মানুষের প্রতি ভালবাসা রাখেন এবং জনগনের কল্যানের
জন্য পেরেশান হন তাহলে আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারেন। আর যদি তা না করেন তাহলে ইহকাল
ও পরকাল উভয় ক্ষেত্রে অপরাধী, লাঞ্ছিত ও শাস্তির যোগ্য
হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাসূলে করীম (সঃ) বলেন, দ্বীন
বলা হয় নসিহত ও কল্যান কামনাকে। এই কথা তিনি একাধিকক্রমে তিনবার বলেছেন। হাদীস
বর্ননাকারী সাহাবীগন বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলামঃ হে
আল্লার রাসূল! এই নসিহত ও কল্যান কামনা কার জন্য ? উত্তরে
তিনি এরশাদ করলেনঃ আল্লাহ তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল,
মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম জনগনের জন্য। কল্যান
কামনার মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি হয়। কল্যান কামনার অর্থ হলো
তারা সঠিক কাজ করলে তাদের সহযোগিতা করা, আর অন্যায় কাজ
করলে তাদের সৎপথে পরিচালনার চেষ্টা করা। সাধারন মুসলমান গোমরাহ হলে তাদের যথাসাধ্য
বুঝিয়ে সৎপথে আনতে হবে। তারা মূর্খ হলে তাদের মধ্যে দ্বীনের শিক্ষা প্রচার করতে
হবে। রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা ও সেবার ব্যবস্থা নিতে হবে। মজলুম হলে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিগতভাবে জুলুম থেকে
মুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। তাদের কেউ মৃত্যুবরন করলে তার কাফন,
জানাযার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। সংকট
মোকাবেলায় সামর্থঃ
আন্দোলন কে
যে কোন সংকট ও বিপদ-আপদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সংকটের চড়াই-উৎরাই পার করে একটি আন্দোলন লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলে।
তাইনেতৃত্ব এমন হতে হবে যিনি সংকট মোকাবেলা করাবেন ঠান্ডা মাথায় এবং বীরত্বের
সাথে। সংকটকালে কি ধরনের ব্যবস্থাপনা বা পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেন তার উপর নেতৃত্বের একটি দিক মাত্র,
নেতৃত্বের জন্য আর কিছু দরকার।
১০।
সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতাঃ
কথায় বলে
সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ
নিতে পারলে আন্দোলন অনেক এগিয়ে যাবে। সময় সুযোগ বুঝে যারা কাজ করতে পারেন তারা
মানুষের সমবেদনা ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন।
১১।
সাংগঠনিক যোগ্যতাঃ
মানুষকে
সংঘবদ্ধ ও সংগঠিত করা এবং দলীয় কর্মসূচীর আলাকে পরিচালনা যোগ্যতা নেতার মধ্যে
থাকতে হবে। সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা রিপোর্ট সংগ্রহ
তত্তাবধান প্রশিক্ষণ, পর্যালোচনার
মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন জেনে তা তিনিই তার লক্ষ্য হাসিলে সাফল্য লাভ করেন।
বর্তমান দুনিয়ায় নেতৃত্ব কাজটাও একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করেছে। তাই শাইখ টাইপ
বা ব্যক্তিতান্ত্রিক নেতৃত্বের কোন সুযোগ নেই।
১২।
প্রশাসনিক ও নির্বাহী যোগ্যতাঃ
পরিকল্পনা
গ্রহণ, বন্টন, বাস্তবায়নের
মেকানিজম সম্পর্কে নেতা সর্তক হবেন এবং যাবতীয় কার্যক্রমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে
সক্ষম হবেন। যতাযথ লোক নিয়োগ করতে পারলে অনক কাজ সহজ হয়ে যায়। কোন কাজটি করার
যোগ্যতা কার আছে এ সম্পর্কে নেতার সুস্পষ্ট ও গভীর জ্ঞান না থাকলে তার পরিকল্পনা
ব্যর্থ হয়ে যাবে। কোথাও কোন সমষ্যা ও জটিলতা দেখা দিলে দ্রুততার সাথে তার সমাধান ও
নিস্পত্তি করতে না পারলে সংগঠন বা আন্দোলন খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব ব্যাপারে যেসব
নেতা বা দায়িত্বশীল উদাসীন তারা কোন ক্রমেই সঠিক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম নন।
১৩।
নেতাকে সদাচারনের অধিকারী হতে হবেঃ
নেতার
ব্যবহার, চালচলন মার্জিত ও
সুন্দর হতে হবে। তার ব্যবহারে কোমলতা মানুষকেআকৃষ্ট করবে। সদাচারননের জন্য দলমত
নির্বিশেষে সকল মানুষকে কাছে টানতে পারবেন। তার সে․জন্য
ও ভদ্রতা হবে প্রশ্নাতীত। তার সাথে সাক্ষাতে মানুষ মনের কথা তাকে খুলে বলতে পারবে।
আল্লারনবীর কাছে যেমন মানুষ অকপটে তাদের গোপন অপরাধের খবর বলে দিত।
১৪।
নেতা হবেন রহমদিল ক্ষমাশীলঃ
পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ বলেন: “ফাবিমা রহমাতিম
--------” (আল ইমরান : ১৫৯)।
“হে নবী ইহা খোদার সবচেয়ে বড় অনুগ্রহের বিষয় যে তুমি এইসব লোকের জন্য
খুবই নম্র স্বভাবের লোক হয়েছ। অন্যথায় তুমি যদি উগ্র স্বভাব ও পাষান হৃদয়ের
অধিকারী হতে তবে এইসব লোক তোমার চর্তুদিক হতে দূরে সরে যেত, অতএব এদের মাফ করে দাও। তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া কর এবং দ্বীন
ইসলামের কাজকমে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অবশ্য কোন বিষয়ে তোমার মত যদি সুদৃঢ় হয়ে
যায় তবে খোদার উপর ভরসা কর। ব¯‧ত
আল্লাহ তাদের ভালবাসের যারা তার উপর ভরসা করে কাজ করে।”
কোরআন মজীদের এই আয়াত এবং মহানবী (সঃ) এর জীবন ইতিহাস থেকে এটা
প্রমাণিত যে, নেতাকে রহম দিলের অধিকারী হতে হবে এবং তার
মধ্যে উগ্রতা ও কঠিন্য থাকবে না। প্রতিশোধ নেয়ার মনোবৃত্তিও তার থাকবে না। মক্কা
বিজয়ের পর মহানবী (সঃ) ক্ষমার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা বিশ্ব ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।
১৫।
নেতা হবেন বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ও আকাশের মত উদারঃ
আল্লাহর
রাসূল (সঃ) তায়েফে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আল্লার সাহায্যে তায়েফ
বাসীকে তিনি ধ্বংস করে দিতে পারতেন। কিš‧ তিনি তা না করে তাদের হেদায়তের জন্য দোয়া করলেন। মহান আল্লাহ তায়ালাও
নবী (সঃ) কে ক্ষমাশীলতার নীতি অনুসরন করার নির্দেশ দিয়েছেন। “হে নবী! নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর। মারূফ কাজের উপদেশ দান
করতে থাক ও মূর্খ লোকদের সাথে জড়িয়ে পড় না।” (আরাফ : ১৯৯)
“ও লা মান ওয়া সাগারা ইন্না জালিকা লামিন আজমেল উমুর” (সূরা আশ শূরা : ৪৩)
“অবশ্য যে ব্যক্তি ‣ধর্য্য
ধারন করবে এবং ক্ষমা করবে ইহা নিঃসন্দেহে বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ন কাজের
অন্যতম।” “আল্লাহ নিজে কোমল
ও মেহেরবান। তিনি প্রত্যেক কাজে তাই কোমলতা ও মেহেরবানীর নীতি পছন্দ করেন।”
(বুখারী ও মুসলিম)
“হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন এক গ্রামবাসী মসজিদে
নববীতে পেশাব করে দিল। তখন লোকেরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য উঠে দাঁড়াল। নবী (সঃ)
বললেন ঃ ছাড় তাকে। আর তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। যাতে পেশাবের চিহৃ
দূর হয়ে যায়। কারন তোমদের সহজ নীতি ও ব্যবহারের ধারক হিসেবে পাঠানো হয়েছে। কঠোর
নীতির ধারক হিসেবে নয়।” (বুখারী)
কোরআন মজীদে
আল্লহ তায়ালা বলেন “তরা যেন ওদের
ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদেরকে
ক্ষমা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আন নূর :২২) মহানবী (সঃ) এর সাথে
যারা অসে․জন্য মূলক আচরন করেছেন মহানবী (সঃ) তাদের সাথেও হাসিমুখে উদার
ব্যবহার করেছেন।
১৬।
নেতা হবেন অল্পে তুষ্ট এবং ত্যাগীঃ
ইলামী
নেতৃত্ব সহজ সরল জীবন যাপন করবেন। অল্পে তুষ্ট থাকবেন। দুনিয়ার সম্পদ ও প্রতিপত্তি
অর্জনের পিছনে দে․ড়াবেনে না।
“তারা নিজেদের তুলনায় অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে- যদিও তারা নিজেরা
অভুক্ত থাকে।” (হাশর:০৯)
মহানবী (সঃ)
ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনে অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অসংখ্য নজীর পাওয়ো যায়। ইসলামী
আন্দোলনের নেতার জন্য এটা মানানসই নয় যে তিনি শুধু তার নিজের প্রয়োজন পূরনের দিকে
লক্ষ্য রাখবেন। নিজে কষ্ট করে অন্যের প্রয়োজন পূরণ করার মত বড় মনের অধিকারী যারা
হতে পারেন তারাই সমাজ ও জাতির নেতৃত্ব করার অধিকারী হতে পারেন। আর যারা নিজের
সবকিছু ঠিকঠাক রেখে নেতৃত্ব করতে চান তারা এক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে পারেন না।
অন্যকে অগ্রাধিকার করার ওয়াজ করা যত সহজ তার বাস্তবায়ন করা ততোধিক কঠিন। এই একটি
গুন মানুষকে অনেক বড় ও মহান করতে পারে।
১৭।
নেতাকে তার নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন হতে হবেঃ
নেতা জাতিকে
আদর্শিক দিগদর্শন দিবেন। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করবেন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য
গড়ে তুলবেন। নেতা মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি করবন। নেতা জনগনের
মধ্যে জজবা ও প্রেরণা সৃষ্টি করবেন। নেতাকে তার মূল কাজ সম্পর্কে সজাগ ও সর্তক
থাকতে হবে। লক্ষ্য হাসিলের জন্য তাকে একটি শক্তিশালী টিম গড়ে তুলতে হবে। কারণ
নেতৃত্বের সাফল্য নির্ভর করে তার সঙ্গী-সাথীদের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর। গনভিত্তি ও
ব্যপক জনসমর্থন ও জনগনের সহমর্মিতা লাভ ছাড়া ইসলামী বিপ্লব সফল হতে পারবে না। তাই
ইসলামী নেতৃত্ব কে এ ব্যাপারে সর্বাধিক সচেতন হতে হবে। জনসমর্থন ও গনভিত্তি
অর্জনের কাজ কতটা অগ্রসর হচ্ছে সে ব্যাপারে নেতার দায়িত্ব অনেক বেশি। জনগনের মধ্যে
ইসলামের ব্যপক চর্চা ও ইসলামের শিক্ষা সম্প্রসারণ ছাড়া ইসলামী নেতৃত্ব গনভিত্তি ও
জনসমর্থন অর্জন করতে পারবে না। তাই নেতাকে এ ব্যাপারে সক্রিয় হতে হবে। ইসলামী
আন্দোলন যেহেতু জনগনের মধ্য থেকে উত্থিত একটি আন্দোলন তাই জনগন ইসলামের দিকে
যতবেশি অগ্রসর হবেন ইসলামী নেতৃত্বও ততবেশি মজবুত হবে। তাছাড়া জনগনই এই নেতৃত্ব
বাছাই করবে। নবী করিম (সঃ) বলেন “তোমরা
যে ধরনের লোক হবে তোমাদের নেতাও ঠিক সে ধরনেরই হবে।” (মেশকাত)
সুতরাং দেখা
যাচ্ছে সৎ আদর্শ নেতৃত্ব সুষ্টির ক্ষেত্র জনগন। কাজেই জনগন যদি সৎ হয় তাহলে তাদের
মধ্য থেকে সৎপ্রকৃতির ও আদর্শনিষ্ঠ নেতা বের হবেন। আর জনগন যদি খারাপ হয় তাহলে
তাদের নেতাও খারাপ হবে। ইসলামে যেহেতু নেতা নির্বাচনের জনগনের সমর্থন প্রয়োজন হয়
সেহেতু জনগন সৎ না হলে তাদের নির্বাচিত নেতা সৎ ও যোগ্য হতে পারে না আবার অসৎ
নেতারাও জনগনকে অসৎ করে ছাড়ে। নেতার আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে তার ও জনগনের মধ্যে যারা
লিংক ম্যান হিসেবে কাজ করবে তাদের গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া। যে নেতার লিংকম্যানরা গণমুখী সে নেতাও গণমুখী এবং
জনপ্রিয়। নবুয়ত প্রাপ্তির অনেক আগেই মুহাম্মদ (সঃ) এর সামাজিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি
সমাজ দিয়েছে। তাকে আল-আমিন, আস-সাদিক উপাধিতে ভূষিত
করেছিল। তার ব্যক্তিগত তৎপরতা ও কর্মকান্ডের মাধ্যমেই তিনি তদানীন্তন সমাজে এক
স্বীকৃতি ব্যক্তিত্ব হিসাবে মর্যাদা লাভ করেিেছলেন। নেতৃত্বের জন্য সাংগঠনিক
পরিমন্ডলের আস্থা ও
স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়। সাধারণ জনগনের আস্থা ও স্বীকৃতি লাভে যত্নবান হতে হবে।
১৮।
নেতা হবেন ভারসাম্যপূর্ণ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্নঃ
ইসলামে
যেহেতু নেতৃত্ব খন্ডিত করার কোন অবকাশ নেই, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, ও আত্মাধিক ক্ষেত্রে আলাদা
নেতৃত্বের অস্তিত্ব নেই সেহেতু ইসলামী নেতৃত্বকে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের
অধিকারী হতে হবে। কোন বিশেষ ঝোাঁক প্রবণতা তার জন্য মানানসই নয়। তিনি রাজনীতি,
ধর্ম, সংস্কৃতি এবং আত্মিক উন্নতি সার্বিক ব্যপারে মধ্যম পন্থার অনুসারী হবেন। তার
ব্যক্তিত্বে যেমন গাম্ভীর্য এবং পরিপক্কতা থাকবে আবার তেমনি সরলতা ও অন্যদের
হাসিমুখে সম্ভাষন জানানোর গুনাবলীও থাকতে হবে। কৃচ্ছতা,
অধ্যবসায়, সাধনা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, উন্নত চরিত্র, সুমধুর ব্যবহার ও নমনীয়তা এবং সর্বোপরি আল্লাহপ্রেম, মানবপ্রেম গুনাবলী সমাহার।
মানুষ
তাদের নেতাকে যেমনটি দেখতে চায়ঃ
- ১. উন্নত ক্সনতিকতা ও নির্মল
চরিত্রের অধিকারী
- ২. জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন
- ৩. দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী
- ৪. অসাধারণ সততা ও যোগ্যতার
অধিকারী
- ৫. চিন্তাশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির
অধিকারী
- ৬. নম্র, ভদ্র, বিনয়ী
ও সুমধুর ব্যবহারের অধিকারী
- ৭. পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সংকট ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী
- ৮. ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের প্রতীক
- ৯. অধ্যবসায়ী, সাধক ও পরিশ্রমী
- ১০. সহনশীল, উদার ও পরিপক্ক
- ১১. নির্লোভ ও নির্মোহ
- ১২. সংগঠন পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলা
বিধানে পারদর্শী
- ১৩. আস্থাভাজন ও অসহায়ের আশ্রয়দানকারী
- ১৪. উদ্যোগী ও সক্রিয়
- ১৫. আকর্ষণীয় ও শৈল্পিক মনোবৃত্তির অধিকারী
- ১৬. শিক্ষানুরাগী ও শৈল্পিক মনোবৃত্তির অধিকারী
- ১৭. দেখতে শোভন, মানানসই পোশাক-পরিচ্ছদে চৌকষ, স্মার্ট
- ১৮. সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিদান
ও অন্যের মর্যদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল
- ১৯. মানষিকভাবে শক্ত, সহাজ ও সচেতন
- ২০. দায়িত্বশীল ও কর্তব্য পরায়ন
- ২১. উদার, মহৎ ও ক্ষমাশীল
- ২২. খোদাভীরু ও আল্লাহর প্রেমিক
- ২৩. পক্ষপাতহীন ও নিঃস্বার্থ
- ২৪. পরোপকারী ও গণমুখী
- ২৫. সকল ব্যাপারে অগ্রগামী ও
আদর্শ স্থাপনকারী
- ২৬. বিপ্লবী ও সংগ্রামী
No comments
Thank You For your Comments.