ইসলামী আন্দোলন : কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
লেখকঃ খুররম জাহ্ মুরাদ
প্রাথমিক
কথাঃ
ঐতিহাসিকভাবে
একথা সত্য যে, প্রাক ইসলামী যুগে
মানুষে মানুষে কোন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিলনা। বিভিন্ন গোত্র, দল, খান্দানে বিভক্ত ছিল। ছিল পরস্পরের রক্ত
পিপাসু ও জানমাল ইজ্জতের দুশমন। এমতাবস্থায় শত্রুতা ভুলে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের
মহান শিক্ষা দিয়েছিল হযরত মুহাম্মদ (সা)। যার প্রভাবে সর্বকালের সবচেয়ে বিশৃঙখল
জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে রূপান্তরিত হতে পেরেছিল। প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল একটি
আদর্শ রাষ্ট্র, আর তা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র পারস্পরিক
ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সুতরাং বলা যায় ইসলামী আন্দোলনের
কর্মীদের জন্য এমন একটি ঔষধ তথা পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ অতিব
প্রয়োজন।
মৌলিক
আলোচনাঃ
প্রকৃত পক্ষে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে তিনটি
১.
প্রয়োজনীয় গুনাবলী
২.
ধ্বংস ও দুর্বলকারী উপাদান এবং তা তেকে বাঁচার উপায়
৩.
যে সমস্ত গুনাবলী সম্পর্ককে মজবুত ও উন্নত করে বইটির ৪টি ভাগে রয়েছেঃ
- ১. পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি, তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
- ২. চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা ও তার
মৌলিক বৈশিষ্ট্য
- ৩. সম্পর্ককে বিকৃতি থেকে রক্ষা
করার উপায়
- ৪. সম্পর্ককে দৃঢ়তর করার পন্থা।
পারস্পরিক
সম্পর্কের ভিত্তি তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
১.
সম্পর্কের ভিত্তি ও মর্যাদা
- সম্পর্কের প্রকৃতি
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের
সম্পর্ক একটি আদর্শিক সম্পর্ক
- এটা কোন হালকা বা ঠুনকো সম্পর্ক
নয়। গভীর ও প্রগাঢ় ভালবাসা এবং স্থিতিশীলতার সমন্বয়ে রচিত।
২.
ভ্রাতৃত্ব ঈমানের অপরিহার্য দাবি
- পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গোটা
জীবন ওৎপ্রোত ভাবে জড়িত। এজন্য ঈমান মুমিনদের কে সকল মানুষদের সাথে
সাধারণভাবে এবং পরস্পরের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়।
- আর এ সম্পর্ককে আদল ও ইহসানের
উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা দেয়।
৩.
বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবের জন্য ভ্রাতৃত্ব অপরিহার্য
- ঈমানের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী
ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি
- বিপ্লবের জন্য একটি সুদৃঢ়, স্থিতিশীল ও ভ্রাতৃত্বসূলভ সম্পর্ক
অপরিহার্য।
- এ সম্পর্কের প্রকৃতি হবে সীসা ঢালা
প্রাচীরের ন্যায়।
৪.
ভ্রাতৃত্বের দাবি তার গুরুত্ব ও ফলাফল
- ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে
সোহার্দ্যমূলক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, রহমত ও ভালবাসার সম্পর্ক
- ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব, রাসুলের বানী-“তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতোক্ষণ
না পরস্পরকে ভালোবাসবে” (মুসলিম-আবু হুরায়রা)
- ভ্রাতৃত্বের ফলাফল:-
- ঈমান পূর্ন হবে
- আখেরাতের সফলতা
৫.
আখিরাতে ভ্রাতৃত্বের সুফল
- আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসার
সম্পর্ক স্থাপন কারীরা আরশের ছায়াতলে থাকবেন
- সম্পর্ক স্থাপন কারীদের জন্য
নূরের মিম্বর তৈরি হবে।
৬.
পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব
- কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য এক
ঈমানের ভিত্তিতে পারস্পরিক ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন ইসলামী আন্দোলনের জন্য
গুরুত্বপূর্ন
- পারস্পরিক সম্পর্কের বিকৃতি গোটা
দ্বীনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
চরিত্রের
প্রয়োজনীয়তা ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য
১.
কল্যান কামনা :- কল্যাণ কামনার প্রকৃত
মানদন্ড হচ্ছে যে, মানুষ নিজের জন্য
যা পছন্দ করবে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ
পরস্পরকে ভালবাসবে এবং কল্যাণ কামনা করবে যেরূপ সহোদর ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করা হয়।
২.
আত্মত্যাগ :-
একজন মুসলমান তার ভাইয়ের জন্য শুধু নিজের পছন্দকে পছন্দই করেনা
বরং নিজের উপর তাকে অগ্রাধিকার দেয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ নিজের প্রয়োজনকে
মুলতবী রেখে অপরের প্রয়োজন মেটাবেন।
৩.
আদল (সুবিচার) :-
- লোকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা ও
ভারসাম্য বজায় রাখা
- প্রত্যেকের অধিকার স্বাধীন ও
নিরপেক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।
৪. ইহ্সান
(সদাচরণ) :-
- ইহসান অর্থ হল সম্পর্কের
সৈান্দর্য্য ও পূর্নতা দান করা।
- সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদল যদি
অপ্রীতি ও তিক্ততা থেকে রক্ষা করে তবে ইহসান তাতে মাধুর্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি
করে।
৫.
রহমত :-
- রহমতের এ গুণই ব্যক্তিকে জনপ্রিয়
করে তোলে এবং সাধারণ লোকদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে।
- রাসুলের বানী- “যারা রহম করে, রহমান তাদের প্রতি রহম করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো,
যেন আসমানবাসী তোমাদের রহম করেন।”
৬.
মার্জনা :-
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ পরস্পর একে অন্যের দোষত্রুটি মার্জনা
করবেন। কারণ যারা দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার
ক্ষমা ও মার্জনার ভীতি গ্রহণ করা উচিৎ।
৭.
নির্ভরতা :-
মোমিনগন একে অন্যের উপর যেন নির্ভর করতে পারে। অর্থাৎ তার সমস্ত
গোপন বিষয়াদির ব্যাপারেও পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে। আর
এটাই হল ভ্রাতৃত্বের দাবি।
৮.
মূল্যোপলব্ধি :-
মানুষ তার এ সম্পর্কের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে এতটুকু অবহিত
হবে, যাতে করে এর সঠিক মূল্যটা সে উপলব্ধি করতে পারে। আর
এটা তখনি সম্ভব হবে যখন সে কোন ক্রমেই তার এ সম্পর্ক ছিন্ন করতে সম্মত হবেনা।
সম্পর্ককে
বিকৃতি থেকে রক্ষা করার উপায়
১.
অধিকারে হস্তক্ষেপ :-
একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে তার ভাইয়ের অধিকারের মধ্যে কোন
একটি অধিকার ও হরণ করার অপরাধ যাতে সে অপরাধ না হয় তার প্রতিকারের দিকে দৃষ্টি
রাখা। রাসুল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি কসম খেয়ে কোন
মুসলমানের হক নষ্ট করেছে, আল্লাহ নিঃসন্দেহে তার প্রতি
জাহান্নামকে অনিবার্য এবং জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন।
২.
দেহ ও প্রানের নিরাপত্তা :- কোন মুসলিম ভাইয়ের
দেহ প্রাণের নিরাপত্তার জন্য একজন অন্যের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। রাসুল (সা:)
বলেন, “মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সঙ্গে লড়াই করা
হচ্ছে কুফরী।” (বুখারী, মুসলিম)
৩.
কটুভাষা ও গালাগাল :-
কোন ভাইকে সাক্ষাতে গালাগাল করা তার সঙ্গে কটু ভাষায় কথা বলা এবং
ঠাট্রা বিদ্রুপ করা সম্পূর্ন নাজায়েজ। রাসুল (সা:) বলেন, “কোন কটুভাষি ও বাদ স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি জান্নাত প্রবেশ করবে না।”
৪.
গীবত :-
গীবত হচ্ছে মানুষ তার ভাইয়ের সামনে নয় বরং তার পেছনে বসে নিন্দা
করা।
৫.
ছোগলখোরী :-
গীবতের একটি বিশেষ রূপ হল চোগলখোরী। রাসুল (সা:) বলেন, “চোগলখোর জান্নাতে যাবে না।”
৬.
শরমিন্দা করা :-
আপন ভাইকে তারা সাক্ষাতে বা অন্য লোকের সামনে তার দোষত্রুটির
জন্য লজ্জা দেওয়া এবং এভাবে অপমান করা শরমিন্দার অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা:) বলেন,
“যে ব্যক্তি তার ভাইকে তার গুনাহের জন্য লজ্জা দিল তার দ্বারা
সেই গুনাহ কাজ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না।” রাসুল
(সা:) আরো বলেন, “তাদেরকে কোন দোষ বা গুনাহের লক্ষ্য
বানিয়ে শরমিন্দা ও অপমানিত করো না।”
৭.
ছিদ্রান্বেষণ :-
কোন ভাইয়ের দোষত্রুটি খুজে বেড়ানোই ছিদ্রান্বেষণ করা। রাসুল
(সা:) বলেন, “মুসলমানদের দোষ খুঁজে বেড়িয়োনা। কারণ,
যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ ও গুনাহ খুঁজতে থাকে,
আল্লাহ তার গোপন দোষ ফাঁস করতে লেগে যান। আর আল্লাহ যার দোষ
প্রকাশ করতে লেগে যান, তাকে তিনি অপমান করেই ছাড়েন-সে তার
ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে থাকুক না কেন।”
৮.
উপহাস করা :-
ঠাট্রা বিদ্রুপের মাধ্যমে একে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আল্লাহ
পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় অপর কোনো সম্প্রদায়কে ঠাট্রা করোনা, সম্ভবতঃ সে তার চাইতে শ্রেষ্ঠ হবে। আর কোন নারী অপর কোন নারীকে ঠাট্রা
করো না, সম্ভবত সে শ্রেষ্ঠ হবে তার চাইতে।” (সুরা হুজরাত : ১১)
৯.
তুচ্ছ জ্ঞান করা :-
অপর ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। রাসুল (সা:)
বলেন, “কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে না অপমান করবে আর না
তুচ্ছ জ্ঞান করবে।”
১০.
নিকৃষ্ট অনুমান :-
প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়া কোন মুসলমান যদি তার ভাই সম্পর্কে অহেতুক
সন্দেহ করে তবে তাহাই নিকৃষ্ট অনুমান। অনুমান করে কথা বলা গুনাহের কাজ। এ সম্পর্কে
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগন, বহু অনুমান থেকে তোমরা বেঁচে
থাকো, নিঃসন্দেহে কোন-কোন অনুমান হচ্ছে গুনাহ।” (সুরা হুজরাত: ১২) রাসুল (সা:) বলেছেন, “তোমরা
অনুমান পরিহার করো, কেননা অনুমান হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা
কথা।” (বুখারী,মুসলিম; আবু হুরায়রা রা:)
১১.
অপবাদ :-
গীবতের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ হল অপরের কাছে এক ভাই সম্পর্কে
মিথ্যা বলা যে দোষ এর মধ্যে সে নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ প্রবিত্র কুরআনে বলেন,
“যারা মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে
কষ্ট দেয়, তারা আপন মাথায় ‘বুহ্তান’
ও স্পষ্ট গুনাহ চাপিয়ে নিলো।”
(সুরা আহযাব: ৫৮)
১২.
ক্ষতিসাধন :-
মুমিনদের লক্ষ্য রাখা অতিব প্রয়োজন যে, তার
দ্বারায় যেন অন্যের ক্ষতি সাধন না হয়। হাদিসে ক্ষতি সাধন কারীকে অভিশপ্ত বলা
হয়েছে।
১৩.
মনোকষ্ট :-
মুসলমানদের অবশ্যই চলা-ফেরা, কথা-বার্তায়
সতর্ক থাকতে হবে যে, তার দ্বারা যেন কেউ মনোকষ্ট না পায়।
কারণ এর দ্বারা সম্পর্ক নষ্ট হয়।
১৪.
ধোকাঁ দেওয়া :-
কথা বার্তা বা লেনদেনে আপন ভাইকে ধোঁকা দেয়া বা মিছে কথা বলা
সম্পর্কে মুসলমানদেরকে অবশ্যই স্মরন রাখতে হবে। রাসুল (সা:) বলেছেন, “সব চাইতে বড় খিয়ানত হচ্ছে এই যে, তুমি তোমার
ভাইকে কোনো কথা বললে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করলো; অথচ
তুমি তাকে মিথ্যা কথা বললে।” (তিরমিযী; সুফিয়ান বিন আসাদ)
১৫.
হিংসা :-
হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা এক ঘৃণ্য ব্যাধি। এই মারাত্মক ব্যাধির
প্রভাবে লোকদের ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়ে। হিংসার মূলে কতগুলো জিনিস থাকে। যেমন বিদ্বেষ,
শত্রুতা, ব্যক্তিগত অহমিকা, অপরের সর্ম্পকে হীনমন্নতা অপরকে অনুগত করার প্রেরনা ইত্যাদি। রাসুল
(সা:) বলেছেন, “তোমরা
হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কারন আগুন যেমন
লাকড়িকে খেয়ে ফেলে, হিংসা ঠিক তেমনি
নেকী ও পুণ্যকে খেয়ে ফেলে।”
সর্ম্পকে
দৃঢ়তর করার পন্থা
১.
মান ইজ্জতের নিরাপত্তা :- এক মুসলমানের জন্য
আরেক মুসলমানের মান ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সম্ভব হলে আন্তরিকতা
গড়ে ওঠে।
২.
দুঃখ কষ্টে অংশগ্রহণ:-
মুমিণগন হচ্ছে একটি দেহ। দেহের এক অংশে যদি আঘাত প্রাপ্ত হয়। তবে অন্য অংশ ও তেমন
কষ্ট অনুভব করে। ঠিক তেমনি এক মুসলমান অপর মুসলমানের দুঃখ কষ্টে শরীক থাকবে।
৩.
সমালোচনা ও নসীহত :-
নিজের দোষ ত্রুটি নিজের চোখে ধরা পড়েনা। তাই মুমিনগন একে অপরকে
গঠন মুলক সমালোচনা ও নছিহতের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে। কারণ
হাদীসে বলা হয়েছে এক মুসলমান অপর মুসলমানের আয়না স্বরূপ।
৪.
মোলাকাত:- একথা সত্য যে পরস্পর অধিক সাক্ষাতের
ফলেই এক জন মানুষের সাথে আরেক জন মানুষের বন্ধন টিকে থাকে। সুতারাং মোলাকাতের
গুরুত্ব অপরিসীম।
৫.
রুগ্ন ভাইয়ের পরিচর্যা :- কোন ব্যক্তি যদি
রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তবে তার সেবা শশ্রুষার প্রয়োজন হয়। ফলে বন্ধুত্বের বন্ধন আরো
দৃঢ় হয়। রাসুল (সা:)বলেন “যখন সে
রোগাক্রান্ত হয় তাকে সেবা কর ”।
৬.
আবেগের বহি:প্রকাশ :- কোন মানুষের মধ্যে
কারো প্রতি প্রেম ভালবাসা থাকলে তা আবেগের মাধ্যমে বহি:প্রকাশ পাবে। এভাবে
পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
৭.
প্রীতি ও খোশ-মেজাজের সাথে মুলাকাত :- পরিচ্ছন্ন মন দিয়ে সাক্ষাতে কথা বলার সময় মিষ্টি কথা বলার এবং ঠাট্টা
বিদ্রুপ ও উপহাস থেকে দূরে থাকা। রাসুল (সা:) বলেছেন, “নেক
কাজের ভেতর কোনোটাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, যদি তা আপন
ভাইয়ের সাথে তোমার হাস্যোজ্জ্বল সাক্ষাৎ করার তুল্যও হবে।” (মুসলিম; আবু যর রা.)
৮.
সালাম :-
পারস্পরিক সর্ম্পক বৃদ্ধিতে সালামের বিকল্প নেই। সালামের মাধ্যমে
অন্ধকার দূরীভূত হয়। এজন্য রাসুল (সা:) বলেন, “পরস্পর
সালাম বিনিময় কর।”
৯.
মুছাফাহা :-
মুছাফাহার মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের
দ্বিতীয় মাধ্যম। অর্থাৎ সালামের গোটা ভাবধারাই এর দ্বারা পূর্নতাপ্রাপ্ত হয়। রাসুল
(সা:) বলেছেন, “মুছাফাহার দ্বারা তোমাদের পারস্পরিক
সালামের পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে।” (তিরমিযী; আবু উমালাহু রা.)।
১০.
উৎকৃষ্ট নামে ডাকা :-
কাউকে তার পছন্দনীয় ভাষায় সম্বোধোন করলে সে খুশী হয়। আন্তরিকতা
চলে আসে। পক্ষান্তরে উপনামে বা বিকৃত নামে ডাকলে মন খারাপ করে সম্পর্ক নষ্ট হয়।
১১.
ব্যক্তিগত ব্যাপারে উৎসুক্য :- আন্তরিক ভালোবাসার একটি অন্যতম তাকিদ হচ্ছে, নিজের
ব্যক্তিগত ব্যাপারের ন্যায় আপন ভাইয়ের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও উৎসুক্য পোষণ করা।
রাসুল (সা:) বলেছেন, “এক ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির সঙ্গে
বন্ধুত্ব করবে, তখন তার কাছে থেকে তার নাম, তার পিতার নাম এবং তার গোত্রপরিচয় জিজ্ঞেস করে নিবে। কারণ এর দ্বারা
পারস্পরিক ভালোবাসার শিকড় অধিকতর মজবুত হয়।” (তিরমিযী, ইয়াজিদ বিন নাআমাহ রা.)
১২.
হাদীয়া :-
সম্পর্ক বৃদ্ধির অতি উত্তম পন্থা হল মাসে মাসে উপহার দেওয়া।
রাসুল (সা:) বলেছেন, “একে অপরকে হাদিয়া পাঠাও, এর দ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং হৃদয়ের দূরত্ব ও শত্রুতা
বিলীন হয়ে যাবে।” (মুয়াত্তা মালিক; আত্বা)
১৩.
শোকর-গোজারী :-
অপরের ভালোবাসা উপলব্ধিকে প্রকাশ করার জন্যে শোকরগোজারী হচ্ছে
একটি উত্তম পন্থা। রাসুল (সা:) বলেছেন, “কেউ যখন তাঁর
খেদমতে কিছু পেশ করত তিনি শুকরিয়ার সাথে তা গ্রহণ করতেন এবং কেউ তার কোন কাজ করে
দিলে সেজন্যে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন।
১৪.
একত্রে বসে আহার :-
আন্তরিকতা ও ভালবাসা প্রকাশের একটি চমৎকার পন্থা হল একত্রে বসে
আহার করা। নবী কারীম (সা:)-এর কাছে কোন খাবার জিনিস থাকলে অথবা কোথা থেকে কিছু
আসলে তিনি গোটা মজলিসকে তাতে শরীক করাতেন।
১৫.
দোয়া :- একজন আরেক জনের জন্য দোয়া করলে যদি সে ব্যক্তি তা দেখতে পায়
তবে সে মুগ্ধ হয়। এভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে সম্পর্ক
বৃদ্ধি পায়।
১৬.
সুন্দরভাবে জবাব দেয়া :- পারস্পরিক কথা
বার্তায় কোন প্রশ্নের জবাব সুন্দর ভাবে দেয়া যায়। রাসুল (সা:) বলেছেন, “দুইজন প্রেমিকের মধ্যে সেই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, যে
তার ভাইয়ের প্রতি অধিক ভালোবাসা পোষণ করে।”
১৭.
আপোষ রফা এবং অভিযোগে খন্ডন :- কোন ব্যাপারে মনোমালিন্য হলে আপোষে করে নেয়া এবং অভিযোগ খন্ডন করা।
অভিযোগ থেকে বাচতে হলে করনীয়- প্রথমতঃ অভিযোগের সুযোগ না দেওয়া, দ্বিতীয়তঃ
দরাজদিল হওয়া উচিত, তৃতীয়তঃ অভিযোগ পালন না করে তার
ভাইয়ের নিকট প্রকাশ করা উচিত, চতুর্থতঃ অভিযোগে অসন্তুষ্ট
না হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, পঞ্চমতঃ
অভিযোগ জানবার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মসংশোধনের চেষ্টা করা, ষষ্ঠতঃ
অভিযোগ স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দিতে কোনরূপ কার্পণ্য না করা।
১৮.
প্রভুর কাছে তওফিক কামনা :- বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক হচ্ছে ঈমানের একটি বুনিয়াদী শর্ত। একজন
ভাই আরেক জন ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট বিনীত ভাবে মুনাজাত করা উচিত। আল্লাহ পবিত্র
কুরআনে বলেন, “হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই
সব ভাইকে ক্ষমাদান কর যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং আমাদের দিলে ঈমানদার
লোকদের জান্যে কোন হিংসা ও শত্রুতাভাব রেখো না। হে আমদের প্রভু! তুমি বড়ই অনুগ্রহ
সম্পন্ন এবং করুণাময়।” (সুরা হাশর : ১০)
No comments
Thank You For your Comments.