ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
(বইটির
উর্দূনাম: তাজদীদে এহইয়ানে দ্বীন)
লেখক: সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (র:)
অনুবাদক: আব্দল মান্নান তালিব
রেনেসাঁ কি?
রেনেসা ফরাসী শব্দ। এর অর্থ হল-
নবজাগরন, পূর্ণজাগরন,পূনর্জন্ম,
১৪ শতক থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত ইউরোপে
শিল্প, সাহিত্য, কৃষি, অংক শাস্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ভূতপূর্ব উন্নতির
ছোয়া লেগেছিল তাকেই সাধারনত রেনেসাঁ
বলে।
বইটি ৩টি ভাগে বিভক্তঃ
১. ভূমিকা
২. মূল আলোচনা
৩.
পরিশিষ্ট
ভূমিকাঃ
- রেনেসাঁ পুনর্জাগরণ
- মুজাদ্দিদঃ যে
ব্যক্তি দ্বীনকে নতুন করে সঞ্জীবিত ও সতেজ করে তোলেন।
- অজ্ঞতার কারণে সাধারণ
মানুষ ইসলামের ইতিহাসে এমন ব্যক্তিদের মুজাদ্দিদ আখ্যা দিয়েছে যারা পূর্বেকার
মনীষীদের কাজের নিখুঁত পর্যালোচনা করতে অক্ষম।
- তাজদীদ সংস্কার তাজদীদ সম্পর্কে অধিকাংশ লোকের স্বচ্ছ ধারণা
নেই।
- বর্তমানে আমাদেরকে ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার ও পুনরোজ্জীবনে প্রচেষ্টা
চালাতে হলে
ক. ভক্তি-শ্রদ্ধা ও অস্পষ্টতার দ্বারা কোন কাজ করা চলবে
না।
খ. অতীত ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ
করতে হবে।
গ. বিগত শতাব্দীতে আমাদের
নেতৃবৃন্দ কতটা কাজ কিভাবে করেছেন তা জানতে হবে।
ঘ. আমরা তাঁদের কাজ থেকে কতটুকু লাভবান হতে পারি।
ঙ. তাঁদের অসম্পন্ন কাজ কোনগুলি জানতে হবে।
মূল
আলোচনাঃ
- মূল পয়েন্ট ৬টি
- সাবপয়েণ্ট-৩৬টি
মূল আলোচনায় ৫টি দিকঃ
১. ইসলাম ও জাহেলিয়াতের
আদর্শিক ও ঐতিহাসিক দন্দ
২. মুজাদ্দিদের কাজ
৩. মুসলিম জাতির কতিপয় বড় মুজাদ্দিদ ও
তাদের কার্যাবলী।
৪. শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভীর কার্যাবলী
৫. সাইয়্যেদ আহমেদ
বেরিলভী ও শাহ ইসলমাইল শহীদ (রঃ)
৬. পরিশিষ্ট
ইসলামের ও জাহিলিয়াতের আদর্শিক ও
ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব
- পৃথিবীতে
মানুষের জন্য যে জীবন ব্যবস্থাই রচিত হয়েছে তার শুরু হবে অতি প্রাকৃতিক বা ধর্ম
সম্পর্কিত বিষয়াবলি থেকে
- মানুষ কি? মানুষের
মর্যাদা কি? দুনিয়ার জীবন ব্যবস্থা কোন ধরনের? এসবের উপর একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠে। - পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্ম, মত
ও পথের একটি স্বতন্ত্র মৌলিক ও নৈতিক মতবাদ রয়েছে।
জীবন সম্পর্কে চারটি মতবাদ:
-নির্ভেজাল জাহেলিয়াত।
- র্শিক মিশ্রিত
জাহেলিয়াত
- বৈরাগ্য
বাদী জাহেলিয়াত।
- ইসলাম।
নির্ভেজাল
জাহেলিয়াত:
১. পৃথিবী সৃষ্টি আকস্মিক ঘটনার বাস্তব প্রকাশ মাত্র।
২. মানুষ সৃষ্টির
উদ্দেশ্য সৃষ্টির
পিছনে কোন প্রজ্ঞা, সদিচ্ছা ও মহান উদ্দেশ্য কার্যকরী নেই
৩. জ্ঞানের উৎস মানুষের অভিজ্ঞতা
৪.
জবাবদিহিতার অনুভূতি নেই
৫. পার্থিব জীবন সর্বস্ব
৬. কারা গ্রহণ করে :
স্বার্থবাদীরা
৭. মুসলমানদের ও অনেকে গ্রহণ করে
৮. ফলাফল
ক. ব্যক্তিজীবন প্রতারক
খ. সমাজ জীবন
স্বার্থপর নেতৃত্ব
গ. রাষ্ট্রীয় জীবন
শিরক মিশ্রিত জাহেলিয়াত: সারকথা দুটিঃ
১. বিশ্বজাহানের এ ব্যবস্থা কোন ঘটনাক্রমিক
প্রকাশ নয় এবং খোদাহীন ও নয়।
২. কিন্তু একটি খোদা নয়, বহু
খোদা আছে।
উপরোক্ত দুই জাহেলিয়াতকে প্রায়ই পরস্পরকে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে
সহযোগিতার কারণ
১.
নৈতিক চরিত্র ও কাজের ক্ষেত্রে উভয় স্থানে কোন পার্থক্য নেই।
২. শিক্ষা, শিল্প, দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি
প্রভৃতির জন্য শেরক্ মিশ্রিত মতবাদ কোন পৃথক মূলনীতি সরবরাহ করে না।
৩. নির্ভেজাল
জাহেলী সমাজ যে সমস্ত তমুদ্দুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে, মুশরিক
সমাজ ও সেগুলো গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত।
নির্ভেজাল ও শিরক মিশ্রিত জাহেলিয়াত
- শিরক মিশ্রিত জাহেলিয়াত যুগে যুগে
নির্ভেজাল জাহেলিয়াতকে সাহায্য করেছে।
- প্রাচিন যুগে ব্যাবিলন,
মিশর, হিন্দুস্থান, ইরান, গ্রীক, রোম
প্রভৃতি সভ্যতায় এ দুটি জাহেলিয়াতের সহাবস্থান দেখা যায়।
- বর্তমান যুগে জাপানী সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এ জাহেলিয়াতের
দেখা পাওয়া যায়।
সম্পর্কের পিছনের কারণ সমূহ:
- উভয় ক্ষেত্রে উপাস্যের কাছ থেকে
কোন নৈতিক নির্দেশনামা পাওয়া যায়না
- বিভিন্ন বিষয়ে পৃথক কোন মূলনীতি পাওয়া যায় না।
- উভয়ের তামাদ্দুনীক
মূলনীতি এক। তাহল মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব চাপিয়ে দেয়া। মানব সমাজকে বিভক্ত
করা, এক সমাজ কে অন্য সমাজের উপর প্রধান্য দেয়া।
পরিনতি:
শিরক মিশ্রত জাহেলিয়াতের পরিনতি:
১.
বাদশাকে খোদা মানা।
২. আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নেতাদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে
করা
৩. রাজবংশ ও ধর্মীয় নেতাদের যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা।
৪. এক বংশের উপর অন্য বংশের
প্রাধ্যান্যের মতবাদ প্রতিষ্ঠা।
নির্ভেজাল জাহেলিয়াত:
১. বংশ পুজা।
২. জাতী
পুজা।
৩. জাতীয় সাম্রাজ্যবাদ।
৪.
একনায়কতন্ত্র ।
৫. পুজিবাদ।
৬. সমাজতন্ত্র।
বৈরাগ্যবাদী জাহেলিয়াত:
- পৃথিবী মানুষের জন্য কারাগারের শাস্তি স¦রূপ।
- দেহ
পিঞ্জরে আবদ্ধ মানুষের প্রাণ আসলে একটি শাস্তি ভোগী কয়েদী।
- সমস্ত আমোদ, আহলাদ, কামনা
– বাসনা, স্বাদ ও দৈহিক প্রয়োজন আসলে এই কারাগারের শিকল ও লোহার
বেড়ী।
- মানুষ এই জগৎ ও এর বস্তু বিষয়ের সহিত যত বেশী সম্পর্ক
রাখবে ততবেশী শাস্তি লাভের অধিকারী হবে।
নাজাতের পন্থা:
- যাবতীয় আনন্দ উচ্ছাস ত্যাগ
- কামনা বাসনা নির্মূল করা।
- সকল প্রকার ভোগ পরিহার
- দৈহিক প্রয়োজন ও ইন্দ্রিয়ের দাবিসমূহ
অস্বীকার
- স্নেহ, প্রেম
, ভালবাসা নিশ্চিহ্ন করণ
- দেহ ও ইন্দ্রিয়রূপ শত্রুকে ত্যাগ ও সাধনার মাধ্যমে পীড়ন দেয়া
- অধিক পরিমাণের পীড়ন করতে হবে যেন
আত্মার উপরে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকতে না পারে।
বৈরাগ্যবাদ থেকে সৃষ্ট মতবাদ:
- বেদান্তবাদ
- মনুবাদ
- প্লেটোবাদ
- যোগবাদ
- তাসাউফ
- খ্রীষ্টীয় বৈরাগ্যবাদ
- বুদ্ধ মতবাদ
প্রথম দুই ধরণের জাহেলিয়াতকে এই জাহেলিয়াত সহযোগিতা করে ৩ পন্থায়:
১. সৎ ও ধর্মভীরু লোকদের হাতে দুনিয়ার
কর্তৃত্ব তুলে দেয়া
২. জনগণের মাঝে অবাঞ্চিত ধৈর্য্য-সহিঞ্চুতা ও নৈরাশ্যবাদী
দৃষ্টিভঙ্গী সৃষ্টি করে যা রাজা-বাদশাহ,
আমীর ওমরাহ ও ধর্মীয় কর্তৃত্বশীলদের
কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩. নানা রকমের বাহানার মধ্যদিয়ে মনের
তৃপ্তি মিটিয়ে গুনাহ করার সুযোগ সৃষ্টি করে। যেমন-= কাফফারা দানের নীতি উদ্ভাবন
করে যত ইচ্ছা গুনাহ করে
৪. ইন্দ্রিয় সুখ চরিতার্থ করার জন্য দেহ কেন্দ্রিয় প্রেমের বাহানা
৫. রাজা-বাদশাহ
ও ধনীদের সাথে যোগসাজশ করে আধ্যাত্মিকতার জাল বুনানো ইসলাম:
ইসলামঃ
ইসলামঃ চতুর্থ অতি প্রকৃত এ মতবাদটি পেশ করেছেন
আল্লাহর নবীগণ-যার সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ।
১. স্রষ্টার পরিচয়ঃ সমস্ত ক্ষমতা
পূর্ণতঃ একজন মালিক ও শাসকের হাতে কেন্দ্রীভূত যিনি এ সাম্রাজ্য সৃষ্টি করেছেন।
তিনিই এর মালিক একমাত্র শাসক ও পরিচালক। এ সাম্রাজ্যে আর কারো হুকুম চলে না, সবাই
তাঁর নির্দেশের অনুগত।
২. মানুষের পরিচয়ঃ মানুষকে
পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। মানুষের জন্য এ পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষাকাল।
মুজাদ্দিদের কাজঃ
ইসলামকে জাহেলিয়াতের দূষিত পানি থেকে ছেঁকে পৃথক করে নিয়ে কোনো
না কোন পর্যায়ে তাকে তার সত্যিকার নির্ভেজাল আকৃতিতে পুনর্বার অগ্রসর করানোর
প্রচেষ্টা চালানোই মুজাদ্দিদের কাজ।
মুজাদ্দিদের সংজ্ঞা / বৈশিষ্ট্য
- স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী।
- সত্য উপলব্ধি করার মত গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন।
- বক্রতা
দোষমুক্ত সরল বুদ্ধিবৃত্তিতে তাঁর মনোজগত পরিপূর্ণ।
- (মধ্যমপন্থা
অবলম্বনকারী)
- প্রান্তিকতার বিপদমুক্ত হয়ে
মধ্যম পন্থা অবলম্বনের পরিপ্রেক্ষিতে
নিজের ভারসাম্য রক্ষা করার বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন।
- শতাব্দীর
পূঞ্জীভূত ও প্রতিষ্ঠিত বিদ্বেষমুক্ত হয়ে চিন্তা করার শক্তি।
- যুগের বিকৃত গতিধারার সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ও
সাহস।
- নেতৃত্বের জন্মগত যোগ্যতা।
- ইজতিহাদ ও পুনর্গঠনের অস্বাভাবিক ক্ষমতা ।
- ইসলাম সম্পর্কে দ্বিধামুক্ত পরিপূর্ণ জ্ঞানের
অধিকারী।
- দৃষ্টিভঙ্গী ও বুদ্ধিজ্ঞানের দিক দিয়ে পূর্ণ
মুসলমান।
- সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর ব্যাপারে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের
মাঝে পার্থক্য করা।
- অনুসন্ধান চালিয়ে দীর্ঘকালের
জটিল আবর্ত থেকে সত্যকে উঠিয়ে নেয়া।
- আল্লাহ এই পৃথিবীতে একমাত্র স্রষ্টা, আইনদাতা, বিধানদাতা
ও শাসনকর্তা । মানুষ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের মাধ্যমে যে জীবন বিধান তাদের কাছে আসবে তা
মানতে তারা বাধ্য
- দুনিয়া
মানুষের জন্যে পরীক্ষার ক্ষেত্র, সুক্ষ্মতর
পন্থায় মহান আল্লাহ এ পরীক্ষা করছেন।
- দুনিয়ার কোন প্রতিদানই বান্দার জন্যে চুড়ান্ত নয়।
- কর্মের আসল
হিসাব নিকাশের সময় আসবে। তার নাম আখেরাত।
- খুঁটিনাটি ব্যাপারে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের মাঝে পার্থক্য
করার ক্ষমতা।
নবী ও মুজাদ্দিদের মধ্যে
পার্থক্যঃ
১. নবী ঐশী নির্দেশে তাঁর পথে নিযুক্ত হন।
২. তিনি নিজের নিয়োগ
সম্পর্কে অবহিত থাকেন।
৩. তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়।
৪. নবুওয়াতের দাবীর মাধ্যমেই
তিনি নিজের কাজের সূচনা করেন।
৫. তিনি মানুষকে নিজের দিকে আহবান করেন।
৬. তাঁর
দাওয়াত গ্রহণ করা বা না করার উপর মানুষের মুমিন ও কাফের হওয়া নির্ভরশীল। বিপরীত পক্ষে মুজাদ্দিদ এর মধ্যে একটিরও
অধিকারী নন।
মুজাদ্দিদের কাজ:
১. নিজের
পরিবেশের নির্ভুল চিত্রাংকন
২. সংস্কারের পরিকল্পনা প্রণয়ন।
৩. নিজের সীমা-পরিসীমা
নির্ধারণ।
৪. চিন্তারাজ্যে বিপ্লব সৃষ্টির প্রচেষ্টা
৫. সক্রিয় সংস্কার প্রচেষ্টা।
৬. দ্বীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করার প্রচেষ্টা
৭. প্রতিরক্ষামূলক প্রচেষ্টা
৮. ইসলামী ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন।
৯. বিশ্বজনীন বিপ্লব সৃষ্টি।
কামেল বা আদর্শ মুজাদ্দিদ: প্রথম তিনটি শর্ত
মুজাদ্দিদ হবার জন্য অপরিহার্য। অবশিষ্ট ৬ টি অপরিহার্য নয়। তবে এ গুলোর মাঝে ১ টি, ২
টি, ৩ টি, ৪ টি বিভাগে উল্লেখযোগ্য কার্য সম্পাদন করলে তিনি
মুজাদ্দিদ বলে গণ্য হবেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি হবেন আংশিক মুজাদ্দিদ
মুজাদ্দিদের
সংঙ্গা: যে ব্যক্তি দ্বীনকে নতুন করে সঞ্জিবিত করেন তিনি মুজাদ্দিদ।
মুজাদ্দিদ ও মুতাজাদ্দিদের মাঝে পাথর্ক্য:
মুতাজাদ্দিদ:
১. যে ব্যক্তি কোন একটি নতুন জিনিস আবিষ্কার করে জোরে সোরে তার
প্রচলন শুরু করে।
২. যে ব্যক্তি নিছক
মুসলমান নামটি বাকি রেখে সমগ্র জাতিকে পূর্ণরূপে জাহেলিয়াতের রঙে রঞ্জিত করে সেই
মুতাজাদ্দিদ।
মুজাদ্দিদ:
(১) ইসলামকে জাহেলিয়াতের দুষিত পানি থেকে মুক্ত করে ছেকে পৃথক করে
নিয়ে কোন না কোন পর্যায়ে তাকে তার পূর্বেকার নির্ভেজাল আকৃতিতে পূর্ণবার অগ্রসর
করার প্রচেষ্টা চালানোই মুজাদ্দিদের কাজ। এ দিক দিয়ে মুজাদ্দিদ হন জাহেলিয়াতের
ব্যাপারে কঠোর আপোষহীন মনোভাবের অধীকারী। জীবনের নগন্যতম অংশে ও তিনি জাহেলিয়াতের
অস্তিত্বের সমর্থক নন। আর
মুজাদ্দিদগন যে কাজ করেন তাকে বলা হয় তাজদিদ বা সংস্কার।
মুজাদ্দিদের গুনাবলি :
১. স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী।
২. সত্য উপলদ্ধি
করার মত গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়া।
৩. সব রকম বক্রতা থেকে মনোজগত মুক্ত হওয়া।
৪.
ভারসাম্য রক্ষার যোগ্যতা অর্জন করা।
৫. চিন্তা করার শক্তি ।
৬. যুগের বিকৃত
গতিধারার সঙ্গে আপোস না করার সাহস ও শক্তি থাকা।
৭. নেতৃত্বের জন্মগত যোগ্যতা।
৮.
ইজতেহাদ ও পূনর্গঠনের অস্বাভাবিক ক্ষমতা।
৯. ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী
হওয়া।
- যিনি
উপরোক্ত ৯টি কার্য সঠিক ভাবে সমাধা করতে পারবেন তিনিই কামিল মুজাদ্দিদ ।
- এখন পর্যন্ত কোন কামিল মুজাদ্দিদের
আর্ভিবাব হয়নি। তবে ওমর বিন আব্দুল আজিজ এ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিলেন
কিন্তু তিনি সফল কাম হতে পারেননি।
- এ পৃথিবিতে একজন কামিল মুজাদ্দিদ আসবেন তিনি হলেন হযরত
ইমাম মেহেদি (আ:) তার নেতৃত্বেই আবার এ গোটা পৃথিবিতে ইসলাম পূর্নপ্রতিষ্ঠিত হবে।
ইমাম মেহেদি কেমন হবেন :
ইমাম মেহেদীঃ
প্রচলিত ধারণাঃ
১. ইমাম মেহেদী পুরাতন
যুগের কোন সুফী ধরনের লোক হবেন।
২. তসবিহ হাতে নিয়ে অকস্মাৎ কোন মাদরাসা বা খানকাহ
থেকে বের হয়ে ‘আনাল মেহদী’
আমিই মেহেদী বলে চতুর্দিকে ঘোষণা করে
দেবেন।
৩. ওলামা শায়খগণ কিতাব পত্রের সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত করবেন ও বাইয়াত হবেন।
৪.
জিহাদের ডাক দিবেন এবং দোয়া-দরুদ-জেকের তসবিহর জোরে যুদ্ধ জয় হবে।
লেখকের ধারণা
(অনুধাবন)
১. তাঁর নিজের যুগের সম্পূর্ণ আধুনিক ধরনের নেতা হবেন।
২. সমকালীন জ্ঞান
বিজ্ঞানে তিনি হবেন মুজতাহিদের ন্যায় গভীর জ্ঞান সম্পন্ন।
৩. জীবনের সকল সমস্যাকে
তিনি ভালভাবে উপলব্ধি করবেন।
৪. রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা ও যুদ্ধবিদ্যায়
পারদর্শিতার দিক দিয়ে সমগ্র বিশ্বে তিনি নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করবেন।
৫. সকল
আধুনিকদের চাইতে বেশী আধুনিক প্রমাণিত হবেন।
মেহেদীর কাজের ধরন সম্পর্কে লেখকের
ধারণাঃ
১.
তাঁর কাজের কোন অংশে কেরামতি, অস্বাভাবিকতা,
কাশফ, ইলহাম, চিল্লা
ও মুজাহাদা মুরাকাবার কোনো স্থান নেই।
২. একজন বিপ্লবী নেতাকে যেভাবে এ দুনিয়ার
দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, ইমাম
মেহেদীকে ও অনুরূপ পর্যায় অতিক্রম করতে হবে।
৩. তিনি নির্ভেজাল ইসলামের ভিত্তিতে
একটি নতুন ঝপযড়ড়ষ ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ গড়ে তুলবেন।
৪. মানুষের চিন্তা ও মানসিকতার পরিবর্তন
করবেন।
৫. একটি বিপুল শক্তিধর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
৬. আন্দোলন একই সঙ্গে রাজনৈতিক
ও সাংস্কৃতিক উভয়ই হইবে।
৭. একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন।
নবীদের মিশন:
১. যারা বৈরাগ্যবাদের মধ্যে যুক্তি দেখায় তারা রাষ্ট্র ক্ষমতার
প্রয়োজন মনে করেনা।
২. কিন্তু যারা দাবি করে দুনিয়ার ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য
তাদের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যার অনুসরনের মধ্যে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ রয়েছে
তাদের কতৃত্বের চাবিকাঠি হস্তগত করার জন্যে প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া অন্য কোন উপায়
নেই।
৩. নিজের নকশা কে কার্যকর করার জন্যে শক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত তার নকশা
জগতে বাস্তবায়ন হতে পারেনা।
৪. জগতে বিজিত শক্তির নীতি
অনুসারে জ্ঞান বিজ্ঞান, চিন্তা,
শিল্প-সাহিত্য,নৈতিক
চরিত্র, শিক্ষা-ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা,
ইত্যাদি সবকিছুর কাঠামো গড়ে ওঠে।
৫. যে আদর্শের হাতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার
ক্ষমতা নেই জগতের কোথাও তার জন্য একটুও স্থান নেই । বিজয়ী সভ্যতার সমুহ কর্ম জগত
থেকে দুরে সরে পরে। তার ব্যপারে দূর দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ব্যক্তিদের মনেও এ
পদ্ধতি দুনিয়ায় চলতে পারে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ জাগে।
৬. কাজেই হুকুমতে এলাহিয়া
কায়েম করে খোদার তরফ থেকে নবীগন যে ব্যবস্থা নিয়ে এসে ছিলেন তাকে পুরোপুরি
বাস্তবায়ন করাই ছিল নবীদের মিশনের চুড়ান্ত লক্ষ্য।
৭. জাহেলিয়াত পন্থিদের তারা
এতটুকু অধিকার দিতে প্রস্তুত ছিলেন যে,
ইচ্ছা করলে তারা জাহেলি আকিদা
বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। কিন্তু কতৃত্বের চাবিকাঠি তাদের হাতে তুলে
দেয়া যাবেনা।
৮. এ জন্যই প্রত্যেক নবী রাজনৈতিক বিপ্লব সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
নবীদের কাজ:
- সাধারন
মানুষের মাঝে চিন্তার বিপ্লব সৃষ্টি করা। নির্ভেজাল ইসলামিক দৃষ্টিভংগী, চিন্তা
পদ্ধতি, ও নৈতিক ভিত্তি তাদের মাঝে তৈরী করা।
- এ শিক্ষায় প্রভাবিত লোকদের একটি শক্তিশালী দল তৈরী করে
জাহেলিয়াতের হাত থেকে কতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
- ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তার সকল বিভাগে নির্ভেজাল
ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা এবং তার প্রভাব বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া। অন্যদিকে নতুনদের কে
ইসলামের মানসিক ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া।
- প্রত্যেক নবীই রাজনৈতিক বিপ্লব সৃষ্টির
চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে শুরু করেছেন হযরত ইব্রাহিম (আ:) আর শেষ করেছেন হযরত
মোহাম্মদ (স:)।
খেলাফতে রাশেদা
১. হযরত মুহাম্মদ (স.) তেইশ বছর নবুয়াতী
জিন্দেগীতে যে সমস্ত কাজ পূর্ণরূপে সম্পাদন করেন।
২. আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও ওমর
ফারুক (রা.) এর নেতৃত্ব।
৩. উসমান (রা.) এর শাসনামলের ১ম দিককার সময়।
জাহেলিয়াতের
আক্রমণ
৭. হযরত উসমান (রাঃ) শির দিয়েও জাহেলিয়াতকে প্রতিহত করতে পারেন নি।
৮. হযরত
আলী (রাঃ) শহীদ হয়েছেন কিন্তু জাহেলিয়াত অপসারিত হয়নি।
৯. স্বৈরাচার আর
রাজতন্ত্রের ধারকরা ক্ষমতা দখল করে নেয়।
১০. জাহেলিয়াত ক্যান্সারের ন্যায় সমাজে
ছড়িয়ে পড়ে।
১১. জাহেলিয়াত ওলামা-মাশায়েখগণকে বৈরাগ্যবাদী করে তোলে।
মুজাদ্দিদের প্রয়োজনঃ
ক. জাহেলিয়াতের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য,
খ.
দ্বীনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য।
মুসলিম জাতির কয়েকজন মুজাদ্দিদ:
১. হযরত ওমর বিন
আব্দুল আজিজ। জন্ম ৬১ হিজরী মৃত্যু ১০১ হিজরী।
২. হযরত ইমাম আবু হানিফা । জন্ম ৮০
হিজরী মূত্যু ১৫০ হিজরী।
৩. ইমাম মালেক (র:) । জন্ম ৯৫ হিজরী মূত্যু ১৭৯
হিজরী।
৪. ইমাম শাফেয়ী (র:)। জন্ম ১৫০
হিজরী মূত্যু ২৪০ হিজরী ।
৫. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র:)। জন্ম ১৬৪ হিজরী মৃত্যু ২১৪
হিজরী।
৬. ইমাম গাজ্জালী (র:)। জন্ম ৫৪০ হিজরী মৃত্যু ৫০৫ হিজরী।
৭. ইমাম ইবনে
তাইমিয়া (র:)। জন্ম ৬৬১ হিজরী মৃত্যু ৭২৮ হিজরী।
৮. শায়খ আহমদ সিরহিন্দ (র:)। জন্ম
৯৭৫ হিজরী মৃত্যু ১০৩৪ হিজরী।
৯. শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (র:)। জন্ম ১১১৪ হিজরী
মৃত্যু ১১৭৬ হিজরী।
১০. সাইয়েদ আহমদ বেরলভী (র:)। জন্ম ১২০১ হিজরী মৃত্যু ১২৪৬
হিজরী ।
শাহওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রঃ) এর কার্যাবলী
দু’ভাগে
বিভক্ত
১.
সমালোচনা ও সংশোধনমূলক
২. গঠনমূলক
সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভী (রঃ) ও ইসমাঈল শহীদ (রঃ)
এর আন্দোলন ব্যর্থ হবার কারণ
১. তাসাউফের ব্যাপারে মুসলমানদের রোগ পুরোপুরি
অনুধাবন করতে পারেন নি।
২. যে এলাকায় অবস্থান করে জিহাদ পরিচালনা করেন এবং যেখানে
ইসলামী হুকুমাত কায়েম করেন, সে এলাকাটি পূর্ব থেকে এ বিপ্লবের জন্য ভালভাবে
প্রস্তুত করেননি।
৩. আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনগ্রসরতা।
উপমহাদেশের ৫জন মুহাদ্দিস
১. শাহ-ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী
২. মাহমুদুল হাসান দেহলভী
৩. শায়খুল হিন্দ ইসমাইল
দেহলভী
৪. শাহ আজিজুর রহমান
৫. শাহ আব্দুল
হক মুহাদ্দিস দেহলভী
পরিশিষ্ট:
লেখক এ অংশ কে ৬টি ভাগে ভাগ করেছেন ।
১. তাজদিদের প্রকৃতি ও ইমাম মেহেদী ।
২. কাশফ ও
ইসলামের তাৎপর্য এবং মুজাদ্দেদের দাবী।
৩. তাসাউফ ও শায়েখে ধ্যান করা।
৪. একটি
মিথ্যা দোষারোপ ও তার জবাব।
৫. মেহেদীর আলামত ও ইসলামী ব্যবস্থায় তার স¦রূপ।
৬. মেহেদী সমস্যা।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments
Thank You For your Comments.